সৌভিক মজুমদার, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: শুভেন্দু অধিকারীর রক্ষাকবচ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে যাচ্ছে রাজ্য। সূত্রের খবর, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টের দেওয়া রক্ষাকবচ খারিজের আর্জি জানাবে রাজ্য। 


শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তদন্তে সহযোগিতা না করার অভিযোগ জানিয়ে রাজ্য সরকারের দাবি, ‘বারবার বিভিন্ন মামলায় তলব সত্বেও ইচ্ছেকৃতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন শুভেন্দু।’ সূত্রের খবর, ‘তদন্তে সহযোগিতা করতে শুভেন্দুকে নির্দেশ দিক হাইকোর্ট’-এই মর্মে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, কাঁথি, পাঁশকুড়া, নন্দীগ্রাম থানার মামলায় তদন্ত শুরুর আর্জিও জানানো হবে রাজ্যের তরফে। 


উল্লেখ্য, এদিনই শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগে FIR নিয়ে, হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। আপাতত ৪ অগাস্ট অবধি, সমস্ত তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বিচারপতি। বুধবার এই মামলার শুনানি চলাকালীন, বিচারপতির পর্যবেক্ষণে উঠে আসে বাম আমলে বিধানসভায় ভাঙচুরের প্রসঙ্গ। 


বিধানসভায় হুমকির অভিযোগে, শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে FIR নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। বিচারপতির পর্যবেক্ষণে ফিরে এল বাম আমলে বিধানসভায় ভাঙচুরের প্রসঙ্গ। এ বছর বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে চলাকালীন, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, কৃষ্ণ কল্যাণী, সৌমেন রায় এবং তন্ময় ঘোষকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। 


১৭ মার্চ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় FIR দায়ের হয়। ২৯ জুন ৪১A ধারায় নোটিস দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে ডেকে পাঠানো হয়। এরপরই FIR খারিজের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবীরা আদালতে সওয়াল করেন, এর আগেও শুভেন্দু অধিকারীর নামে একাধিক FIR হয়েছে। তিনি আদালত থেকে রক্ষাকবচ পেয়েছেন। তার পরও বারবার রাজনৈতিক কারণে এই ধরনের FIR করা হচ্ছে। 


পাশাপাশি বিরোধী দলনেতার আইনজীবীরা সওয়ালে বলেন, যেহেতু এটা বিধানসভার ভিতরের ঘটনা এবং অধিবেশন চলার সময় ঘটেছে তাই এটা পুলিশের বিচার্য নয়। এর পরই বিচারপতি বিবেক চৌধুরী বলেন, বাম আমলে বিধানসভায় ভাঙচুরের মামলা এখন কী অবস্থায় রয়েছে? সেই মামলাগুলোর কী হয়েছে? সেই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ হয়েছে? বিধানসভার প্রাচীন স্থাপত্য ভাঙচুর হয়েছে, হেরিটেজ ভাঙচুর হয়েছে, আসবাব ভাঙচুর হয়েছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে কী হয়েছে? সেই বিরোধীরা এখন শাসক হয়েছে। তারা যখন করেছে, তখন সেটা বিধানসভার অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিল, তাহলে এখন কেন আদালতে মামলা আসছে? 


রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বিচারপতি বিবেক চৌধুরী বলেন, একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমি জানতে চাই, বিধানসভা ভাঙচুর মামলার বর্তমান পরিস্থিতি কী? সিঙ্গুর আন্দোলন চলাকালীন, ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর ভাঙচুর চালানো হয়েছিল বিধানসভা। ১৬ বছর পর, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পর্যবেক্ষণে ফিরে এল সেই প্রসঙ্গ।
এ দিন শেষমেশ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগের FIR প্রসঙ্গে বিচারপতি সমস্ত তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর ৪আগস্ট পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেন। 


এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজন মনে করলে অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তাঁরা। শুভেন্দুর মামলায় প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার বাম আমলে বিধানসভায় ভাঙচুরের প্রসঙ্গ টানলেন বিচারপতি। সব মিলিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর মামলা ঘিরে চাপানউতোরও চরমে।