রানা দাস, সোমনাথ মিত্র, কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাঁকে ঘিরে জেলায় ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূল (TMC) কর্মীদের মধ্যে। তার মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সঙ্গে নিজের তুলনা টেনে বিতর্ক বাড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী (Siddiqullah Chowdhury)। মমতা জনপ্রিয়, অভিষেক উঠতি নেতা বলেও, গোটা বাংলা জুড়ে তাঁকে নিয়ে উন্মাদনা রয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি।


মমতা, অভিষেকের সঙ্গে নিজের তুলনা সিদ্দিকুল্লার!


পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election 2023) আগে পূর্ব বর্ধমানে জেলা প্রেসিডেন্ট স্তরে ব্যাপক রদবদল ঘটানো হয়েছে। 'এক ব্যক্তি, এক পদ' নীতি চালু করতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জেলা নেতৃত্ব দাবি করলেও, সিদ্দিকুল্লার অঙ্গুলিহেলন এর পিছনে রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন দলের একাংশ। সেই নিয়ে জেলায় সিদ্দিকুল্লার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মিছিলও করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। 


সেই আবহেই মমতা-অভিষেকের সঙ্গে নিজের তুলনা টানলেন সিদ্দিকুল্লা। বর্ধমান থেকে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার দূরে, মক্কায় গিয়ে এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিদ্দিকুল্লা। ভাইরাল হয়েছে তাঁর সেই বক্তব্যের ভিডিও, যার সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। তবে তাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "সারা রাজ্যে আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন জনপ্রিয়তা, পশ্চিমবাংলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন নতুন, উঠতি যুবক হিসেবে কাজ করছেন, আমি তাঁর কাজের প্রশংসা করছি। কিন্তু সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ক্রেজ সারা পশ্চিম বাংলায়।"


শুধু তাই নয়, তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ব্লক প্রেসিডেন্ট না করা নিয়ে হুঁশিয়ারির সুরও শোনা গেল সিদ্দিকুল্লার গলায়। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আমার বিধানসভা কেন্দ্রে, আমি যাকে বলব (ব্লক সভাপতি) সেটা করবেন না, এটা সমীচিন নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমার আশা, উনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী প্রয়োজনে অন্য পথ অবলম্বন করতে পারবে। তার রাস্তা খোলা আছে।"


আরও পড়ুন: Cattle Smuggling Case: সিবিআই তদন্তে ব্যাঘাত নয়, গরুপাচারে পৃথক তদন্ত করতে পারবে না রাজ্য, জানাল হাইকোর্ট


পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন পদে রদবদল করেছে তৃণমূল। মন্তেশ্বরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি করা হয়েছে আজিজুল হককে। সেই নিয়ে আপত্তি সিদ্দিকুল্লার। কারণ ওই পদের জন্য আহমেদ হোসেন শেখের নাম প্রস্তাব করেছিলেন তিনি, যা দলের তরফে মানা হয়নি। সেই নিয়ে সিদ্দিকুল্লা বলেন, "মন্তেশ্বরের ক্ষেত্রে আমি নাম দিয়েছিলাম, আহমেদ হোসেন শেখ। আহমেদ হোসেনকে বাদ দিয়ে আজিজুল রহমানকে সভাপতি করা হয়েছে মন্তেশ্বর ব্লকে। আমার সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়েছিল, সেই বৈঠকে আমি যা বলার বলেছি। এই প্রশ্নে আমাদের সর্বভারতীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ জানাব, যে আপনি পুনর্বিবেচনা করবেন।পঞ্চায়েতে জিততে হলে আহমেদ হোসেন ছাড়া মন্তেশ্বরে ভাল ফল পাওয়া যাবে না। বিজেপি এবং সিপিএম গদ্দারি করে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাবে।"


সিদ্দিকুল্লা আরও বলেন, "আমার কাছে খবর আসছে, আহমেদ হোসেনকে মার্ডার করে এবং এই ছক তৈরি করছে বিজেপির ছেলেরা। উপরে জার্সি তৃণমূলের এবং মন আর গা হল বিজেপির। সিপিএম তাতে শান দিয়ে এসেছে। এই কারণে আহমেদ হোসেনকে সভাপতি না করার প্রশ্নে আমি অত্যন্ত ব্যথা পেয়েছি।"


ব্লকস্তরে রদবদল নিয়ে অসন্তোষ দলের অন্দরে


সিদ্দিকুল্লার এই মন্তব্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে। ক্ষোভের কথা দলের ভিতরেই বলতে পারতেন বলে মন্তব্য করেন পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য়, "উনি দলের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, এভাবে না বলে দলকে বলতে পারতেন, প্রকাশ্যে না বলাটাই ভাল ছিল। আজিজুল আগে থেকেই ব্লক সভাপতি ছিলেন, আহমেদেরও শক্ত সংগঠন আছে, দু’জনকে নিয়েই চলতে হবে।"