কলকাতা: প্রায় এক ডজন মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর এক কলমের খোঁচায় চাকরিচ্যুত হয়েছেন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে। এজলাসে বসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক মন্তব্যও তোলপাড় পড়ে গিয়েছে।
শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির ২টি মামলা সরানোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এছাড়া বাকি মামলাগুলি আগের মতোই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় শুনবেন বলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আইনজ্ঞদের ব্য়াখ্য়া।
নিয়োগ দুর্নীতির বিভিন্ন মামলায়, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের একাধিক নির্দেশ গোটা রাজ্য়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সেটা একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হোক, কিংবা এক কলমের খোঁচায় মন্ত্রী-কন্য়াকে চাকরিচ্য়ুত করা। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রায় এক ডজন মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। যার মধ্য়ে প্রাথমিক থেকে শুরু করে, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের মামলা রয়েছে। ২০২২-এর ২০ মে তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতাকে স্কুল শিক্ষিকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। তাঁর নির্দেশেই তৎকালীন মন্ত্রীর মেয়েকে বেতন হিসেবে পাওয়া ১৬ লক্ষ টাকা ফেরাতে হয়।সেই চাকরি পেয়েছিলেন শিলিগুড়ির ববিতা সরকার।
তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধেও কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। গতবছরের ১৯ মে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, দুপুর ৩টের মধ্যে পরেশ অধিকারীকে CBI-এর অফিসে হাজিরা দিতে হবে।সেই সঙ্গে তিনি এও বলে দেন, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বিমানবন্দরে নামার পর তাঁকে যেন সরাসরি নিজাম প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি যদি বিমানে না ওঠেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে, তিনি আদালত ও CBI-কে ভাঁওতা দিচ্ছেন।
এই নির্দেশের পরই সিবিআই দফতরে হাজিরা দেন তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী।
আরও পড়ুন: Side Effects Of Oranges : গুণের 'খনি', কিন্তু কখন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কমলা লেবু ?
এর আগে গতবছরের ১২ এপ্রিল পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় সম্পর্কেও এরকমই কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। সেদিন সকালে এজলাসে বসে, বিকেলের মধ্য়ে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে CBI-এর কাছে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। সেই সঙ্গে বিচারপতি এও বলে দেন, কোনওভাবেই SSKM-এর উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হতে পারবেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের নির্দেশে চাকরি গেছে বহু অযোগ্য় প্রার্থীর। যাঁরা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে, SSC-র গ্রুপ ডি পদে কর্মরত ১ হাজার ৯১১ জনের চাকরি যায়। এর ঠিক এক মাসের মাথায় ১০ মার্চ SSC-র গ্রুপ সি-তে ৮৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু অযোগ্য়দের চাকরি বাতিলের নির্দেশই নয়। বহু চাকরিপ্রার্থীকে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। তাঁর নির্দেশেই চাকরি পেয়েছিলেন চার বছর ধরে নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাস।