মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান : থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পাণ্ডবেশ্বর (Pandabeswar) কলেজ পাড়ার সার্বজনীন দুর্গাপুজোর সাংস্কৃতির অনুষ্ঠান চলছিল। সেই অনুষ্ঠানই দেখতে ব্যস্ত ছিলেন এলাকার মানুষরা। আর সেই সুযোগের সন্ধানে ছিল চোরেরা। এলাকার মানুষ যখন সাংস্ক্তিক অনুষ্ঠান দেখতে মগ্ন, তখনই সেই সুযোগে পর পর দুটো বাড়ি থেকে সর্বস্ব চুরি করে চম্পট দিল চোরেরা। ঘটনায় এলাকার মানুষ ক্ষোভপ্রকাশ করেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। থানার পাশেই বাড়ি হওয়া সত্বেও কীভাবে চোর বাড়ি থেকে চুরি করে নিয়ে পালাতে পারে, সে প্রশ্ন তুলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা।
নবমীর রাতে এলাকার মানুষ মগ্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে। আর সেই সুযোগে বাড়ি থেকে সর্বস্ব লুঠ করে চম্পট চোরেদের। তাও বাড়ি থেকে ছিল ছোড়া দূরত্বে পাণ্ডবেশ্বর থানা। থানার পাশের পর পর দুটি বাড়িতে এমন কাণ্ড ঘটায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। এলাকার দুই বাসিন্দা উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে চুরি হয়েছে লক্ষাধিক টাকার সোনার গহনা, বাসনপত্র ও নগদ অর্থ। দুর্গাপুজোর নবমীর রাতের আনন্দ মুহূর্তে বদলে গেল বিষাদে। চোরেরা সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাওয়া ভেঙে পড়েছেন দুই পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু বন্দ্যোপাধ্যায় চুরির প্রসঙ্গে বলছেন, 'পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ একেবারেই অকর্মণ্য। তাই থানার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাড়ি হওয়া সত্বেও চোরেরা নির্বিঘ্নে চুরি করে পালিয়ে যেতে পারে।' তিনি দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে চোরকে ধরার কাজ করতে হবে পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশকে। বাবলু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একই সুর আর এক বাসিন্দা দিশা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। তিনিও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। বলছেন, 'কোনও সমস্যায় পড়ে পুলিশে খবর দিলে, পুলিশ অনেক দেরিতে আসে। তাও হেঁটে হেঁটে হেলতে দুলতে আসে। কাজের কাজ কিছুই করে না। শুধু টর্চ জ্বালিয়ে দেখে কাজ শেষ করে দেয়। থানার পক্ষ থেকে যে সিভিক পুলিশকে রাখা হয়েছে, সে তো মোবাইল ফোন দেখতেই বেশি ব্যস্ত থাকে। পুলিশের ভূমিকা এমন হলে এলাকা রক্ষার দায়িত্ব নেবে কে?'
যাঁর বাড়ি থেকে চুরি হয়েছে, সেই সজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী শিখা বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন চুরির ঘটনা। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, 'আমরা সকলেই পুজো মণ্ডপে অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলাম। তার মধ্যে দুবার বাড়িতেও এসেছি। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে এসে দেখি দরজার তালা ভাঙা এবং জিনিসপত্র সমস্ত লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে রয়েছে। পুজো উপলক্ষে বাড়িতে প্রচুর সোনার গয়না ছিল। মেয়ের সোনার গয়না মিলিয়ে আনুমানিক দশ লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না ছিল। তার সঙ্গে বাড়িতে কিছু নগদ টাকাও রাখা ছিল। সেই সমস্ত চুরি হয়ে য়াওয়ার সঙ্গে চোরেরা বাসনপত্রও নিয়ে গিয়েছে।'
থানার সামনের বাড়ির তালা ভেঙে ঢুকে চুরির ঘটনায় রীতিমতো ক্ষিপ্ত এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, থানার একেবারেই সামনে পুজো মণ্ডপে পুজো দিতে যাওয়ার সময় তেন এলাকার উপর নজর রাখেনি পুলিশ? যদিও চুরির ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌছয় পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ। তাদেরকে ঘিরে এলাকার মানুষরা বিক্ষোভ দেখান। চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ।