আশাবুল হোসেন, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা : পঞ্চায়েত ভোটের ( Panchayat Poll )  দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। কোন মাসে হবে, তাও জানা নেই ! কিন্তু এরইমধ্য়ে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে নিত্য়দিন নানা ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসছে! চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল! এই পরিস্থিতিতে নতুন রূপে জনসংযোগে এবং পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাইয়ে নামছেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ( Abhishek Banerjee ) । একাধিক জেলার রাশ ইতিমধ্য়েই হাতে নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক শুরু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। এবার লাগাতার ২ মাস ধরে রাজ্য়ের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়ানোর ঘোষণা করলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তিনি বৃহস্পতিবার বললেন, এই ২ মাসের মধ্য়ে ভোট হলে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে ! অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী বললেন, পঞ্চায়েত ভোট নভেম্বরে চলে যাবে।


ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় পড়ে থাকব : অভিষেক


বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ' ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় পড়ে থাকব। ২ মাস কলকাতায় ফিরব না। জানি রোদ্দুরে কষ্ট হবে ' ।  শুভেনদু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদাররাও জেলায় জেলায় প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। অমিত শাহ ঘন ঘন রাজ্য়ে আসছেন । সিপিএমও নতুন উদ্য়মে প্রবীণ ও ছাত্র-যুবদের মিশেলে নানা ইস্য়ুতে উত্তরকন্য়া থেকে উত্তর ২৪ পরগনা নানা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে । সবার লক্ষ্য় একটাই গ্রাম দখলের লড়াই অর্থাৎ পঞ্চায়েত ভোট! পঞ্চায়েত ভোট হবে কবে? চলতি বছর জুন মাসে শেষ হচ্ছে পঞ্চায়েতের মেয়াদ।

বিধানসভার বিরোধী দলনেতার দাবি, 'পার্থ ধরা পড়েছে। এখন টাটকা জীবন। জুলাইতে হতে পারে। ওরা ভোট টানতে টানতে নভেম্বর অবধি নিয়ে যেতে পারে ' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলছেন, পঞ্চায়েত ভোট আগামী ১৫ দিন পরেও হতে পারে। তৃণমূল যে ২ মাসের কর্মসূচিতে নামছে, তা শেষ হবে জুনের শেষ।  তাই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন তার আগে কি আদৌ ভোট হওয়া সম্ভব? তাহলে কি পঞ্চায়েত ভোট পিছোবে?


 'তৃণমূলে নব জোয়ার'


২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে 'তৃণমূলে নব জোয়ার'। কোচবিহারের দিনহাটা থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে। কিন্তু, পঞ্চায়েতের আগে এতবড় কর্মসূচিতে নামতে হচ্ছে কেন তৃণমূলকে? ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে, বাংলায় বিজেপির কাছে ধাক্কা খায় তৃণমূল। এরপর ভাবমূর্তি ফেরাতে, মানুষের অভিযোগ জানার জন্য দিদিকে বলো, বাংলার গর্ব মমতা, দুয়ারে সরকারের মতো প্রকল্প চালু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে যা ডিভিডেন্ড দেয় তৃণমূলকে।

ভোট মিটতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই, স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে শোরগোল পড়ে যায় গোটা রাজ্যে। একে একে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীরা গ্রেফতার হওয়ায় অনেকটা ব্যাকফুটে চলে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। 
এর মধ্যেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে, আবার দিদির সুরক্ষাকবচ প্রকল্পে, দিদির দূত হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে শুরু করেন তৃণমূলের জন প্রতিনিধিরা। কিন্তু, তাতে বহু জায়গায় ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের।

এই আবহেই বিধানসভা উপনির্বাচনে সংখ্য়ালঘু অধ্য়ুষিত সাগরদিঘিতে সিপিএম-কংগ্রেসের জোটের কাছে হারতে হয় তৃণমূলকে! ফলে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি সংখ্য়ালঘু ভোট সরতে শুরু করেছে তৃণমূলের থেকে? এরইমধ্য়ে সম্প্রতি জাতীয় দলের তকমা হারায় তৃণমূল। তাই কি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুরন্ত ফল করতেই এবার টানা ২ মাস রাস্তায় থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? তাহলে কি পঞ্চায়েত নির্বাচনকে প্রেস্টিজ ব্য়াটল হিসাবে নিচ্ছেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়?

শেষ অবধি কী হবে, তার উত্তর জানা যাবে পঞ্চায়েত ভোটের ফলে।