তুহিন অধিকারী, বিটন চক্রবর্তী ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা ও বাঁকুড়া: বামেদের নবান্ন অভিযানের দিন পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হওয়া ডিওয়াইএফআই নেতা মইদুল ইসলাম মিদ্যার পরিবার চাইলে একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। আজ নবান্নে এমনই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের গোপীনাথপুর অঞ্চল ডিওয়াইএফআই-এর ইউনিট সেক্রেটারি মইদুল ছিলেন পেশায় অটোচালক। বাড়িতে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর ছোট্ট দুই মেয়ে। মা মরা ১২ বছরের ভাগ্নিকেও মানুষ করছিলেন তিনি। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য শেষ। এখন কীভাবে চলবে সংসার? দিশাহীন পরিবার। মইদুলের স্ত্রী বলছেন, ‘চাকরি নেব। তিনটে মেয়ে। মেয়েদের পড়াশোনা আছে। আর আমি, বিধবা শাশুড়ি আছে। সংসার যেন ভালভাবে চলে। যেন বড় চাকরি দেয়। যেন খেতে-পরতে পারি। যে যাওয়ার সে চলেই গেছে। সংসারটা যেন ভালভাবে চলে। আমি চাকরি নেব। তবে কম পয়সার চাকরি নেব না।’


মইদুলের স্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘ও কলকাতার নার্সিংহোমে ভর্তি, এটা আমাদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোন নার্সিংহোমে ছিল, সেটা জানি না।’


মা তহমিনা বিবি কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ‘গতকাল আমার জামাই ফোন করে বলে, দাদা আর নেই। পুলিশ মেরে দিয়েছে। একটা হাসপাতালে দিয়েছিল, সেখানে চিকিৎসা হয়নি। ছেলে একমাত্র রোজগেরে, এখন কীভাবে সংসার চলবে? সরকারি সাহায্য না মিললে পথে বসতে হবে।’


২০১৩-র পর ২০২১-এর কলকাতা। ৮ বছর পর এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর স্মৃতি উসকে দিল বাঁকুড়ার কোতুলপুরের ডিওয়াইএফআই নেতা মইদুল ইসলাম মিদ্যা ওরফে ফরিদের মর্মান্তিক পরিণতি। আবারও কাঠগড়ায় কলকাতা পুলিশ। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকেল থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলকাতার রাজপথ। সব রাগ গিয়ে পড়ে এক পুলিশ অফিসারের উপর। প্রথমে পিছন থেকে মাথায় চাঁটি, খুলে যায় হেলমেট। কোনওক্রমে পালানোর চেষ্টা করেন ওই পুলিশ অফিসার। ততক্ষণে ছিঁড়ে গেছে তাঁর জামা। মারমুখী ডিওয়াইএফআই-এসএফআই কর্মীদের হাত থেকে কোনওক্রমে পুলিশ অফিসারকে ভিড়ের মধ্যে থেকে আগলে বের করে নিয়ে যান এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, ‘শহিদদের নিয়ে পুলিশ উল্টোপাল্টা কথা বলছিল। আমরা না থাকলে আরও কিছু হত।’


অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি হেডকোয়ার্টারের বক্তব্য, ‘তালতলা থানার একজন এএসআই-কে নিগ্রহ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


এদিকে নবান্ন অভিযানে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা ও ডিওয়াইএফআই নেতার মৃত্যু নিয়ে উত্তাল রাজনীতি। 


২০১৩ সালের ২ এপ্রিল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আইন অমান্য আন্দোলনে গিয়ে মৃত্যু হয় এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের। সেবারও কাঠগড়ায় তোলা হয় পুলিশকে। আরও একটি মৃত্যু। অকুলপাথারে পরিবার। এর দায় কি কেউ নেবে?