কলকাতা: অলিখিত ভাবেই তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরি তিনি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও। কিন্তু সেই সর্বভারতীয় তকমাই খুইয়েছে দল। বাংলার বাইরে শিকড় বিস্তার করতে গিয়ে গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মতো একের পর এক রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূল। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নতুন করে সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে। তাই এই পঞ্চায়েত নির্বাচন অভিষেকের কাছে কার্যতই অগ্নিপরীক্ষা, অন্তত ভোটারদের একাংশ তেমনই মনে করছেন। 


আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে অভিষেকের অ্যাসিড টেস্ট হিসেবেই দেখছেন অনেকে। সি-ভোটারের সমীক্ষাতেও তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। ভিন্ রাজ্য়ে লাগাতার হার এবং সর্বভারতীয় দলের তকমা যাওয়ার পর পঞ্চায়েত নির্বাচন অভিষেকের অ্য়াসিড টেস্ট হতে চলেছে কিনা, প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাতে হ্যাঁ  সূচক উত্তর দিয়েছেন ৩৯ শতাংশ ভোটার। পঞ্চায়েত নির্বাচন অভিষেকের যোগ্যতা নির্ধারণের মাপকাঠি নয় বলে মনে করছেন ২৯ শতাংশ ভোটার। এ নিয়ে মতামত জানাতে নারাজ ৩২ শতাংশ। 


তৃণমূলে মমতার পরই এই মুহূর্তে অভিষেকের নাম উচ্চারিত হয়। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে যখন জর্জরিত দল, তাঁকে মুখ করেই 'নয়া তৃণমূল' গড়ার ডাক উঠেছিল শহর কলকাতায়। তাতেই তৃণমূলে মমতার উত্তরসূরি হিসেবে অভিষেককে দেখতে শুরু করেন অনেকে। তাতে আরও মাত্রা যোগ করেন অভিষেক নিজেই। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে, বাংলার বাইরে জোড়াফুল ফোটাতে সচেষ্ট হন তিনি। কিন্তু গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়, সব জায়গা থেকেই খালিহাতে ফিরতে হয়েছে দলকে। 


অভিষেককে সামনে রেখেই যেহেতু বাংলার বাইরে তৃণমূল শাখা বিস্তারে অগ্রণী হয়েছিল, তাই তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দলের অন্দরেও বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে একসময়। মমতাপন্থী এবং অভিষেকপন্থী হিসেবে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে শুরু করেন অনেকেই। একদল জানান, মমতা ছাড়া কারও নেতৃত্ব মঞ্জুর নয় তাঁদের। অন্য পক্ষ আবার অভিষেকই ভবিষ্যৎ বলে মত জানান প্রকাশ্যে। সেই অবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে হয় মমতাকে। দলে বিভাজন চলবে না, প্রকাশ্য বিবাদে জড়ানো যাবে না বলে দলীয় বৈঠকে কড়া বার্তা দেন তিনি। 


তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি অভিষেক। কয়লাকাণ্ডে তাঁকে এবং স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যখন বার বার হাজিরা দিতে হচ্ছে তদন্তকারীদের সামনে, নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর দফতরে কর্মরত 'কালীঘাটের কাকু'কে ঘিরে উত্তাল চারিদিক, সেই সময় জেলায় জেলায় জনসংযোগে নামেন অভিষেক। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি উদ্ধারের দায় কার্যত তাঁর উপরই বর্তায়। তাই এই পঞ্চায়েত নির্বাচন অভিষেকের জন্য অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন ভোটারদের একাংশ, সি-ভোটার সমীক্ষাতেই মিলল ইঙ্গিত।