প্রকাশ সিন্হা, অতসী মুখোপাধ্য়ায় ও সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে এলেও, ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার কথা কার্যতই অস্বীকার করেছিলেন তিনি। তৃণমূলের (TMC) তদানীন্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) দাবি ছিল, ছোটখাটো ঘটনা ঘটলেও, বড় কিছু ঘটেনি। ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে যদিও বিলম্বিত বোধোদয়ের সুর ধরা পড়ল পার্থর গলায়। মৃত্যুহীন নির্বাচনই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করলেন তিনি। (Panchayat Elections Result 2023)


ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে। কোনও বড় ঘটনার কথা নেই। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট চলকালীন হিংসার কথা কার্যত অস্বীকার করে বলেছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়। আর তেইশে ভোটের ফলাফলের দিন বর্তমানে দল থেকে সাসপেন্ডেড সেই পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ই কার্যত বিলম্বিত বোধোদয়ের সুরে বললেন, মৃত্যুহীন নির্বাচনই কাম্য। 


হিংসা, খুনোখুনির লজ্জার ট্র্য়াডিশন অব্য়াহত থাকার পাশাপাশি ভোটের দিনে মৃত্য়ুর নিরিখে ২০১৮-কেও ছাপিয়ে গিয়েছে ২০২৩। বদল হয়নি সন্ত্রাস পরিস্থিতির। তবে, হিংসা নিয়ে সুর বদলালেন তৃণমূলের একদা দু'নম্বর নেতা পার্থ। হিংসা হয়েছে বলে মেনে নিলেন তিনি। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েতে ভোটগ্রহণের দিন হিংসার বলি হয়েছিলেন ১৪ জন। সেবার, ভোট চলকালীন হিংসার কথা কার্যত অস্বীকার করেছিল তৃণমূল। দলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ বলেছিলেন, "ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে। কোনও বড় ঘটনার কথা নেই।"


এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিনই মৃত্য়ু হয়েছে ১৬ জনের। পরে মৃত্য়ু হয়েছে আরও চার জনের, যাঁরা ভোটের দিনই আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই আবহে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি, দল থেকে সাসপেন্ডেড পার্থ কার্যত বিলম্বিত বোধোদয়ের সুরে বললেন, "মৃত্যুহীন নির্বাচনই কাম্য।"


আরও পড়ুন: Panchayat Election Results : 'বাংলায় নির্বাচনে রক্তের হোলি খেলা বন্ধ হোক', হুমায়ুন, চিরঞ্জিতের পর এবার সরব মদন মিত্র


মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের তরফে ফলাফল নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয় পার্থর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, "আমি বলব যে, মৃত্যুহীন নির্বাচন কাম্য।" বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেখানে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠছে, তা নিয়ে জবাব চাইলে পার্থ বলেন, "বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে, তাঁর উন্নয়নকে সমর্থন করেছেন। বাংলার মা-মাটি-মানুষের জয়। শুধু দুঃখ থেকে গেল, মৃত্যুহীন হলে বোধহয় আরও ভাল হতো।"


পার্থর এই বিলম্বিত বোধোদয়কে যদিও কটাক্ষ করেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টচার্য বলেন, "২০১৩-২০১৮ সালেও তো প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছেন! তখন কেন বলেননি? তখন তো বলেছিলেন উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে!" এ নিয়ে পার্থকে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও।


নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই মুহূর্তে জেলবন্দি পার্থ। দল তাঁর থেকে মুখ ঘোরালেও, এখনও তৃণমূলের জয়গানই শোনা যাচ্ছে পার্থর গলায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের জয় নিয়ে তিনি বলেন, "মা-মাটি-মানুষের জয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্বিক উন্নয়নের জয়। আমি আবার বলছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার সার্বিক উন্নয়নের জয়। এই জয় মা-মাটি-মানুষের।"


পার্থকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তাঁর বক্তব্য, "উনি কারাবন্দি। কারাবন্দি নেতা, মমতার পুলিশ থাকলেই এত কথা বলতে পারেন। আপনারা ওঁকে রাজনৈতিক প্রশ্ন করেন কেন? প্রশ্ন করা উচিত, অর্পিতা ভাল আছেন!" নয় নয় করে এক বছর হতে চলল পার্থর জেলজীবনের। সেই নিয়েও কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন বিরোধীরা।