বিজেন্দ্র সিংহ, সমীরণ পাল ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা : অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানোর দায়িত্ব রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের ( State Election Commission )। অতীতে সন্ত্রাস হয়েছে মানে এই নয়, যে, তার পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্য় নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের দায়িত্ব পালনের কথা মনে করিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট ( Supreme Court ) । ১০ বছর আগে, ২০১৩ সালে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে চেয়ে, সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য় নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। আর এখন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রুখতে সেই আদালতে যাচ্ছে রাজীব সিনহার কমিশন! 


রাজ্য়জুড়ে একটাই প্রশ্ন নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে, যে রাজ্য় নির্বাচন কমিশনার কি আদৌ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন, না কি তিনি শাসকের অঙ্গুলিহেলনে চলছেন। আর এই প্রেক্ষাপটেই মঙ্গলবার রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, 'অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানোর দায়িত্ব রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের। রাজ্যে (পশ্চিমঙ্গে) ২০১৩, ২০১৮ সালের নির্বাচনে গন্ডগোলের উদাহরণ আছে। অতীতে সন্ত্রাস হয়েছে মানে এই নয়, যে, তার পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্য় নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।'


২০১১ থেকে ২০২৩, তৃণমূল সরকারের এই এক যুগ শাসনকালে, রাজ্য়ে তিন তিনবার পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। প্রথমটা ২০১৩, তারপর ২০১৮ আর এবার ২০২৩।  ২০১৩ সালে, কেন্দ্রীয় বাহিনী না এনেই এক দফায় পঞ্চায়েত ভোট করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার।  কিন্তু, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট অবধি গেছিলেন তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। সেই সময় রাজ্য়ের বিরুদ্ধে, রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের হয়ে আদালতে লড়াই করেছিলেন আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা। শেষমেশ সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ৫ দফায় পঞ্চায়েত ভোট করিয়েছিলেন মীরা পাণ্ডে। আর সেই ঘটনার ১০ বছর পর, ২০২৩-এ এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল রাজীব সিহার নেতৃত্বাধীন রাজ্য় নির্বাচন কমিশন। তাৎপূর্যভাবে, এবার কমিশনের হয়ে সওয়াল করলেন আইনজীবী সেই মীনাক্ষী অরোরা। আগেরবার যিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছিলেন, 
এদিন তিনিই কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরোধিতায় সরব হলেন।



সওয়াল জবাবে, রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা বলেন, প্রাথমিক মূল্যায়নে ৬১,৬৩৬ বুথের মধ্যে ১৮৯টিকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বুথগুলির জন্য অতিরিক্ত বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য় সরকার তার জন্য় আবেদন জানিয়েছে। এরপর কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতি নাগরত্না বলেন, এবার একদিনে এত সংখ্য়ক বুথে ভোট। শুধু সংবেদনশীল বুথই নয়, অন্য় বুথগুলিকেও আপনাদের আশ্বস্ত করা উচিত। আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে সমস্যা কোথায়? আপনাদের SLP কি আদৌ সমর্থন যোগ্য়?

আর বিস্ময়কর বিষয় হল, প্রথম হাইকোর্ট, তারপর সুপ্রিম কোর্টে হেরে যাওয়ার পর মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ২২ জেলার জন্য ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয়েছে কমিশনের তরফে। অর্থাৎ জেলা পিছু কেন্দ্রীয় বাহিনী মাত্র ১ কোম্পানি! ১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীতে সাধারণত থাকেন ১০০ থেকে ১০৫ জন। তাঁদের মধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজে লাগানো হয় কম-বেশি ৮০ জনকে।  হিংসাস্নাত পশ্চিমবঙ্গের জন্য় কি এই সংখ্য়ক কেন্দ্রীয় বাহিনী আদৌ পর্যাপ্ত? উঠছে প্রশ্ন।