কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: গোটা মন্ত্রিসভায় (PM Modi Ca) বাংলা থেকে মাত্র ২ জন। তাও আবার প্রতিমন্ত্রী। এবার বাংলা থেকে বিজেপি ১২টি আসন পেয়েছে। আর সেখান থেকে সুকান্ত মজুমদার এবং শান্তনু ঠাকুর শুধুমাত্র প্রতিমন্ত্রী হলেন। আগের বারের মতো জাহাজপ্রতিমন্ত্রীই রইলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur)। অন্যদিকে প্রথমবারেই দুটি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হলেন সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। শিক্ষা (MoS Education) এবং উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হলেন তিনি।


২০১৪ সালে প্রথমবার কেন্দ্রে সরকার গঠন করেন নরেন্দ্র মোদি। তারপর ২০১৯, তারপরে ফের ২০২৪। তিনবার টানা কেন্দ্রে সরকার গঠন করলেও একবারও বাংলা থেকে কাউকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়নি। বাংলা থেকে কেন একজনকেও পূর্ণমন্ত্রী করা হল না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধীরা। বিষয়টি নিয়ে তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।    


এবারও যেমন বাংলা থেকে কাউকে ক্য়াবিনেট মন্ত্রী করা হয়নি, তার পাশাপাশি গতবারের থেকে কমে গিয়েছে প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যাও। গতবারের সরকারে বাংলা থেকে ৪জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবার মাত্র ২ জন। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি তুলে ধরেছেন বাংলা থেকে আসন কমে যাওয়ার বিষয়টি। যেহেতু আসন কমে গিয়েছে তার জন্য যতটুকু পাওয়ার কথা ততটুকুই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।


যদিও এই দাবি মানতে নারাজ বিরোধীরা। তারা তুলে আনছেন অন্য রাজ্যগুলির উদাহরণ। বাংলা থেকে যেমন আগেরবারের তুলনায় আসন কমেছে। তার সঙ্গেই বিজেপি প্রবল ধাক্কা খেয়েছে উত্তরপ্রদেশ-মহারাষ্ট্রে। তারপরেও সেখান থেকে পূর্ণমন্ত্রী করেছে মোদি সরকার। তাহলে বাংলায় তেমনটা কেন হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠছে।    


এমনকি এবার কেরল থেকে প্রথমবার লোকসভায় সাংসদ পেয়েছে বিজেপি। সেখান থেকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। তামিলনাড়ু ও পাঞ্জাব থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বিজেপিকে। সেখান থেকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। ধাক্কা লেগেছে হরিয়ানায়। সেখানে গতবারের অর্ধেক আসন পেয়েছে বিজেপি- সংখ্যাটা ৫। তাঁদের মধ্যেই মন্ত্রিসভায় ৩ জন। রাজস্থানে গতবারের থেকেও অনেকটা খারাপ ফল করেছেন বিজেপি। আগেরবার সবকটা আসন পেলেও এবার ওই রাজ্যে বিজেপির ঝুলিতে এসেছে মাত্র ১৪টি আসন। তারপরেও সেখান থেকে ২জন ক্যাবিনেটে জায়গা পেয়েছেন। এরকম উদাহরণ আরও রয়েছে। তেলঙ্গানা থেকে বিজেপির ৮ জন সাংসদ জিতেছেন। তারমধ্য়ে একজন ক্য়াবিনেট মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী। অন্যতম বড় উদাহরণ উত্তরপ্রদেশ। এই রাজ্যেও এবার বিরোধীদের কাছে বহু আসন খুইয়েছে বিজেপি। গত লোকসভা ভোটের তুলনায় এবার ওই রাজ্যে প্রায় অর্ধেক আসন পেয়েছে পদ্মশিবির। সেখান থেকে একাধিক ক্যাবিনেট মন্ত্রী করা হয়েছে। জোট শরিক HAM, আপনা দল থেকে ১ জন করে সাংসদ হলেও ক্যাবিনেট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। 


কংগ্রেস আমলে বাংলা একাধিক ক্যাবিনেট মন্ত্রী (Cabinet Minister from West Bengal) পেয়েছে। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়, মালদার বরকত গণিখান চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন। কয়লা, রেল ও আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বাংলায় মাত্র একটি আসন জিতলেও তপন সিকদার, সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (জুলুবাবু) মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।  


কিন্তু গত দুই দফা এবং এই বারও বাংলা থেকে মোদি মন্ত্রিসভায় কোনও পূর্ণমন্ত্রী নেই। আর এবার মাত্র ২ জন প্রতিমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের সুর শোনা গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, 'আমরা ২ কোটি ৩৮ লক্ষ মানুষের ভোট পেয়েছি। আমরা কর্মীরা, আপসেট। কারণ, আমরা পূর্ণমন্ত্রী পাইনি। পূর্ণ মন্ত্রী থাকলে অনেক কাজের সুবিধা হয়। কেন পাইনি উপরওয়ালা জানে। দু কোটি ৩৮ লক্ষ মানুষ ভোট দিয়েছে তাদের কাছে খারাপ বার্তা যাবে। আশা তো থাকে! আমাকেও তো শুনতে হয়। কষ্ট পাই! যেখানে পূর্ণ মন্ত্রী পাওয়া গেল না।' অন্যদিকে দিলীপ ঘোষের মুখে শোনা দিয়েছে অপেক্ষার কথা। তাহলে কি বিধানসভা ভোটের আগে মন্ত্রিসভায় কোনও পরিবর্তন হবে? নাকি এই ২জনকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে বাংলাকে। 


আরও পড়ুন: মোদির মন্ত্রিসভায় কোন দায়িত্বে শাহ? জয়শঙ্করের হাতে কোন মন্ত্রক? কে কোন দায়িত্বে?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।