কলকাতা: ২০১১-র নির্বাচনে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। দশ বছর পর ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেন না। করোনা আবহে শারীরিক অবস্থার কারণে নিজেকে গৃহবন্দিই রাখলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মাঝে ২০১৬-র নির্বাচনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জোটের হয়ে প্রচারও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে ভাষণ দিতে পারেননি তিনি। এসেছিলেন গাড়িতে করে। ব্রিগেডে গাড়িতেই বসেছিলেন তিনি। এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংযুক্ত মোর্চার ব্রিগেড সমাবেশে আসতে পারেননি তিনি।
আজ পাম অ্যাভিনিউর পাঠভবন স্কুলে আজ ভোট দিলেন বুদ্ধদেব-জায়া মীরা ভট্টাচার্য ও তাঁর মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য। কিন্তু পাম অ্যাভিনিউর ফ্ল্যাটের বাইরে বেরোতে পারলেন না তিনি। মীরা ভট্টাচার্য বলেছেন, শারীরিক অবস্থা ভোট দিতে পারার মতো নেই। শরীর সায় না দিলে তো করার কিছু নেই।
মীরা ভট্টাচার্য বলেছেন, এতদিন একসঙ্গে ভোট দিতাম। এবার তা হল না।
এতদিন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে ভোট দিতে আসতে দেখা যেত। এবার সেই ছবি দেখা গেল না। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কয়েকদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
এবার ভোটের প্রচারে থাকতে পারেননি বুদ্ধদেব। কিন্তু বিবৃতি ও অডিও বার্তার মাধ্যমে সংযুক্ত মোর্চাকে ভোটদানের আহ্বান জানাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে অডিও বার্তা দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অডিও বার্তায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজ্যে এবারের বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। এ এক সন্ধিক্ষণ। বিগত বামফ্রন্টের আমলে আমাদের স্লোগান ছিল- কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। কৃষিতে সাফল্য এসেছিল, শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। হতাশা দেখা দিয়েছে। কৃষিতে সংকট, কৃষকদের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষিজাত দ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। শিল্প ও শিল্পায়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গত ১০ বছরে কোনও উল্লেখযোগ্য শিল্পই আসেনি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে শ্মশাণের নীরবতা।...গণতন্ত্র আক্রান্ত। মহিলাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত। এই পরিস্থিতি চলতে পারে না’।তাঁর দাবি, তৃণমূলের আমলে তরুণদের সামনে কোনও আশার আলো নেই।
এর ঠিক একদিন আগেই প্রেস বিবৃতি দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। প্রেস বিবৃতিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকেই যে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ভাবনা আমরা রাজ্যের মানুষকে বলার চেষ্টা করেছি তা হল, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। আমরা সেই পথে এগিয়েছি। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান সরকারের হাতে গত দশ বছরে সেই কৃষিতে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। উল্লেখযোগ্য কোনও শিল্প আসেনি এক দশকে। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে শ্মশানের নীরবতা। সে সময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন বাংলার যুব সমাজ। সরকারি ক্ষেত্রে কোনও নিয়োগ নেই। বাংলার মেধা ও কর্মদক্ষতা যা আমাদের সম্পদ - তা আমাদের রাজ্য ছেড়ে ভিনরাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।...একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের স্বৈরতান্ত্রিক দাপাদাপি অন্যদিকে বিজেপির বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে সর্বনাশা আর্থিক নীতি, বিভেদের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ - যার পেছনে রয়েছে আরএসএস-এর ভয়ঙ্কর মতাদর্শ। এরই পরিণতিতে আজকের এই ধ্বংসচিত্র।...বর্তমান অবস্থার অবসান ঘটাতেই হবে। আজ বাংলার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।