সৌভিক মজুমদার, করুণাময় সিংহ ও কৃষেন্দু অধিকারী, কলকাতা : মনোনয়নের পর থেকেই ক্রমাগত আসছে হুমকি-হুঁশিয়ারি ! এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেন মালদার মানিকচকের মোট ১৭ জন কংগ্রেস প্রার্থী। মামলা গ্রহণ করেছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। আজ, মঙ্গলবার এই শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। 


পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বেই বেনজির হিংসার ঘটনা ঘটেছে বাংলায়। শুধু মনোনয়ন পর্বেই রাজ্যে প্রাণ গেছে ১০ জনের !
এবার শুরু হয়েছে ভোটের প্রচার। ভোটদান এবং ভোটগণনার পর্ব এখনও বাকি ! এই প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন মালদার মানিকচকের ১৭ জন কংগ্রেস প্রার্থী ! তাঁদের মধ্যে ১৫ জন গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির দুই কংগ্রেস প্রার্থীও।


মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ সম্রাট আলি বলছেন, 'নিরাপত্তা চেয়ে আমরা আদালতে গেছি। এখানে প্রার্থী থেকে পুরুষ ভোটার সকলেই ভয়ে রয়েছে।'

গত ১৭ জুন রাতে এই গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেরই বালুটোলা গ্রামে কংগ্রেস প্রার্থী শরিকুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় কয়েকজন কংগ্রেস কর্মীর বাড়িতেও সেদিন হামলা হয় বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে মামলাকারী কংগ্রেস প্রার্থীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হওয়ায় তাঁদের বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকী ভয়ে তাঁরা প্রচারেও বেরোতে পারছেন না।

এই অবস্থায় ভোটের ফল বেরনো পর্যন্ত নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। আবেদন শুনে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। এ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'ছিনতাই করা হচ্ছে, অপহরণ করা হচ্ছে বিরোধী দলের কর্মীদের। কংগ্রেসের এক কর্মীকে করা হল। ভোট যত এগিয়ে আসবে, সন্ত্রাস বাড়বে, খুন বাড়বে, বোমাবাজির ঘটনা বাড়বে। পঞ্চায়েত ভোটের দিন এই বাংলা রক্তাক্ত হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা আছে।'

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, 'এখনও অবধি পশ্চিমবঙ্গে ভোটে ১০ জনের মৃত্য়ু হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট করান। ভয় কীসের ? মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে কে সঠিক, কে ভুল।'

মানিকচকের এই এলাকায় বরাবরই কংগ্রেস ও তৃণমূলের সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয়ে এসেছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ছিল ১০টি। পাঁচটি করে আসনে জয়লাভ করে কংগ্রেস ও তৃণমূল। শেষে এক কংগ্রেস পঞ্চায়েত সদস্যের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। এবারের ভোটেও গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে হাড্ডাহাড্ডি লডাই!


এবার এই গোপালপুর পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬। তৃণমূল এখানে সব আসনে প্রার্থী দিলেও, ১৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। সেই জন্যই কি ভোটের আগেভাগেই শুরু হয়েছে হুমকি-হুঁশিয়ারি ?

মঙ্গলবার কংগ্রেস প্রার্থীদের করা মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।