কলকাতা: টলিগঞ্জের বাড়ি থেকে গাড়ি চালিয়ে কসবা আসছিলেন। নবীনা সিনেমা হলের সামনে এসে এক মুহুর্ত থমকালেন পরিচালক। বড় একটা পোস্টারে তাঁর ছবির নাম লেখা। 'মুখোশ'। করোনা কাঁটা সরিয়ে ফের খুলছে সিনেমা হল। বাংলা ছবির দর্শককে হলমুখী করার গুরুদায়িত্ব 'মুখোশ'-এর কাঁধেই। এসভিএফের অফিসে পৌঁছে এবিপি লাইভের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বসেই প্রথমে সেই উদ্বেগ মেশানো ভালোলাগার কথা বলে ফেললেন বিরসা দাশগুপ্ত।


আগামী ১৯ তারিখ এসভিএফের ব্যানারে মুক্তি পাচ্ছে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, অনির্বাণ চক্রবর্তী ও পায়েল দে অভিনীত সাসপেন্স থ্রিলার 'মুখোশ'। বিরসা বলছেন, 'কথায় আছে না, ইসনে খাতা খোলা.. করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর আমাদের ছবি মুখোশ দিয়ে কার্যত শুরু হচ্ছে রুপোলি পর্দার যাত্রা। আমরা যে কাজটা করি, সেটার একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে। সিনেমা হল না খুললে সেই বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয় না। মুখোশ প্রথম মুক্তি পাচ্ছে এটা একদিক থেকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে উদ্বেগেরও। আর হ্যাঁ, ভালোলাগাটা দ্বিগুণ হল কারণ, হোর্ডিংটা সিঙ্গল স্ক্রিনে দেখলাম।'


 


এর আগে 'বিবাহ অভিযান', তারপর 'মুখোশ'। অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কাজ করছেন তিনি। দুই ছবিতে কতটা আলাদাভাবে আবিষ্কার করলেন পরিচালক? বিরসা বলছেন, 'অনির্বাণ আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। বিবাহ অভিযানে ও যে চরিত্রটায় অভিনয় করেছিল, সেটা নিছক মজার। এর আগে ও প্রায় সমস্ত ছবিতেই ভীষণ গম্ভীর অভিনয় করেছে। বিবাহ অভিযান দেখার আগে কেউ ভাবতে পারেনি অনির্বাণ ওইরকম ধুতি পরে লোক হাসাবে। তখনই কাজ করার সময় মনে হয়েছিল, ওকে যেমন চরিত্রই দেওয়া হবে, নিজেকে সেইভাবে গড়ে নিতে পারবে ও। মুখোশ-এ ওর চরিত্রটা আবার বেশ গম্ভীর। এটা নিয়ে শ্যুটিংয়ের সময় খুব মজা হত। আমার ওই দুটো ছবির টিম এক। অনির্বাণ যখনই শট দিতে যেন, ওকে বুলেট সিং-এর ডায়গল বলে হাসিয়ে দিত কেউ না কেউ। অনির্বাণ হেসে ফেলে বলত, আমায় হাসাস না, এটা গম্ভীর চরিত্রের অভিনয়।'



রোম্যান্স, কমেডি, সাসপেন্স থ্রিলার.. এরপর? নতুন ছবিতে টলিউডের কোন নায়ক নায়িকার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আছে বিরসার? পরিচালক বলছেন, 'আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার নতুন কাজটা যেন আগের কাজের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়। আমি এখনও পর্যন্ত ফ্যামিলি ড্রামা বানাইনি। আগামী ছবিতে তেমন কিছু ভাবতে পারি। আর টলিউডের প্রায় সব অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গেই ইতিমধ্যে কাজ করে ফেলেছি আমি। তবে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব সত্ত্বেও যীশুর (সেনগুপ্ত) সঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। আর নায়িকাদের মধ্যে এখনও ঋতুদি (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) আর শুভশ্রীর (গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গে কাজ করিনি। দুজনেই ভীষণ ভালো অভিনেত্রী। এছাড়া ঋদ্ধি (সেন), ঋতব্রতদের (মুখোপাধ্যায়) বড়পর্দায় পরিচালনা করিনি। তবে আমার ছবিতে সবসময় মহিলা চরিত্র প্রাধান্য পেয়েছে আর পাবেও। এমন একটা ছবি যদি বানাই, যেখানে যীশু থাকবে, ঋতু থাকবে.. মনে হয় ব্যাপারটা আকর্ষণীয়ই হবে।'



নির্বাচনের আগে থেকেই টলিউডের সিংহভাগ অভিনেতা অভিনেত্রী ও পরিচালককে রাজনীতির আঙিনায় দেখা যাচ্ছে। সক্রিয় রাজনীতি কী টলিউডে কাজ পেতে সাহায্য করে? বীরসা বলছেন, 'আমার একটা রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে আর সেটা আমি সবার সামনেই স্পষ্ট করে বলি। কিন্তু কখনও সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবিনি আর ভাবব ও না। আমি কেবল পরিচালনাটাই করি। কাজ করতে গিয়ে রোজ নতুন কিছু শিখি। কখনও অভিনয় করার কথাও ভাবিনি ঠিক এই কারণেই। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই আছেন যাঁরা রাজনীতি সামলাচ্ছেন আবার পরিচালনা বা অভিনয়ও করছেন। যেমন রাজ। কী দক্ষতার সঙ্গে রাজনীতির মঞ্চ সামলাচ্ছে এখন। আবার যখন পরিচালনা করবে, সেদিকেই মন থাকবে।'



স্বামী পরিচালক কিন্তু তাঁর পরিচালিত বড়পর্দার কোনও ছবিতে নেই স্ত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী। কোনও বিশেষ কারণ রয়েছে? বিরসা বলছেন, 'কেরিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে আমি যে ৩টে টেলিফিল্ম সেই তিনটেতেই বিদীপ্তা ছিল। কিন্তু তারপর যে ছবিগুলো বানিয়েছি, তার একটাতেও বিদীপ্তা নেই। কারণ ওই গল্পগুলোতে বিদীপ্তার অভিনয় করার মত কোনও চরিত্র ছিল না। থাকলেও তা এতটাই ছোট, আমি বিদীপ্তাকে তা দিতে চাইনি। ওর মত প্রতিভাবান অভিনেত্রীকে এমন একটা ছবি বানাব, যার সিংহভাগ জুড়ে কেবল ও থাকবে। একজন পরিচালক হিসাবে এটা আমার ব্যর্থতা যে ওর জন্য একটা চরিত্র এখনও পর্যন্ত লিখে উঠতে পারিনি।'