কলকাতা : প্রয়াত অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত । বহুদিন অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শিল্প সংস্কৃতি জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া ।
অসামান্য মঞ্চাভিনেতা স্বাতীলেখাকে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ পেয়েছে মাত্র কয়েকটি ছবিতেই। তবে যে ক'টি ছবিতে তিনি কাজ করেছেন, প্রত্যেকটি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছে। তা সে 'ঘরে-বাইরে'ই হোক বা 'বেলাশেষে' । দুটি ছবিতেই তাঁর বিপরীতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ।সৌমিত্র-স্বাতীলেখা জুটিকে একেবারে অন্য মাত্রায় বাংলা ছবির দর্শকের কাছে তুলে ধরেছিলেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় ।
এ ছবির অন্যতম অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য এবিপি লাইভকে দেওয়া টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে জানালেন, 'দিদি অনেকদিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন । আমরা জানতে পারতাম ওঁর শরীর খারাপের কথা। ওঁর লড়াইয়ের কথা । করোনাকালে অনেকদিন দেখা হয়নি। তাই স্মৃতি হাতড়াতে গেলে মনে পড়ে যায় 'বেলাশেষে' ও 'বেলাশুরু'র দিনগুলোর কথা । 'বেলাশুরু'র যখন শুটিং করেছি, তখন দিদির শরীর মাঝে মাঝে অসুস্থ থাকত। এই নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তা করতাম । স্বাতীলেখাদি তো জাত অভিনেত্রী। তাই শরীরের কষ্টকে কীভাবে হার মানাতে হয় তা তিনি ভালই জানতেন। যেমন ' বেলাশেষে' তেমনই 'বেলাশুরু'। শরীর যেমনই থাকুক না কেন অভিনয়ে ছাপ পড়তে দেননি কখনওই। মনে পড়ে সেই দিনটির কথা একটি দৃশ্যে আমরা মা-বাবার বিয়ে দিচ্ছি। সেটা ভাবলে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দেয় । অদ্ভুত একটা প্রাণ ছিল ওই দৃশ্যের শুটিংয়ে। কনের সাজে স্বাতীলেখাদিকে কী অপূর্ব দেখাচ্ছিল। দিদিকে বললাম, দাঁড়াও তোমাকে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে দিই। টুকটুকে ঠোঁটে যে সুন্দর মানিয়েছিল ! আজ বারবার সেই মুখটাই আমার চোখে ভেসে আসছে।
কতবার হাত দুটো চেপে ধরে বলেছেন, অপরাজিতা তুই যে কী ভাল অভিনয় করিস। কেন মঞ্চে অভিনয় করলি না। আমি তখন বলতাম দিদি আমার যে ভয় করে!
বহুবার জিজ্ঞেস করেছি ওকে কী করে পারলে বলো তো সেই সময় দাঁড়িয়ে সৌমিত্র বাবুর সঙ্গে ওরকম একটা চুমুর দৃশ্য করতে? সত্যজিৎ রায়ের ঘরে-বাইরের ওই দৃশ্যটা আমার ছোটবেলার মনে দাগ কেটে যাওয়া ছায়াছবির দৃশ্য গুলির মধ্যে অন্যতম । সে সময় পর্দার চুম্বন তো খুব সহজ ছিল না। বিশেষত বাংলা ছবির জগতে । উনি বলতেন, 'আমি আর কী করলাম , সবই তো মানিকদাই করিয়ে নিলেন। এমনটাই ছিলেন স্বাতীলেখাদি। অত বড় মাপের অভিনেত্রী হয়েও এতটুকু অহংকার ছিল না ।
'বেলা শেষে'-র প্রমোশন করেছি যখন, প্রতিটা দিন ছিল একেকটা উদযাপন । মনে পড়ে, ছবির প্রিমিয়ারে সৌমিত্র বাবু ছাব্বিশের যুবকের মত করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন । স্বাতীলেখাদিও কী প্রাণোচ্ছ্বল। ' বেলাশুরু ' যখন দর্শক দেখবে তখন বুঝবে ' বেলাশেষে' কেও যেন ছাপিয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখ রয়ে যাবে একটাই, যে দুটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে এই ছবি, সেই দুটো মানুষ আর রইলেন না । 'বেলাশুরু' মুক্তি পাবে মানুষ দেখবে স্মৃতির অ্যালবাম এর মত।