কলকাতা: 'ঐন্দ্রিলা ঠিক ফিরবে..' চেতনে অবচেতনে এই কথাটাই যেন বলে চলেছিলেন সকলে। এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেই তো সকলে চোখ রাখছিলেন সংবাদমাধ্যমে, কেউ বা সোশ্যাল মিডিয়ায়.. টেলিফোনে... মিম, ট্রোলের যুগে সবাই হাতে হাত রেখে মানসিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বছর ২৪ -এর মেয়েটার। কোনও নেতিবাচক মন্তব্য নেই.. উপহাস নেই, শুধু একযোগে প্রার্থনা। ২ বার ক্যানসারকে জয় করেছেন যে বীর যোদ্ধা, একটা ব্রেন স্ট্রোক, কয়েকটা হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গেও তিনি লড়ে নেবেন ঠিক। ঐন্দ্রিলা জিতে যাবে.. ওকে জিততে হবে। ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma) যেন ও হেনরির 'দ্য লাস্ট লিফ' গল্পের সেই শেষ পাতাটা, যাঁকে দেখে প্রেরণা পেতেন হাজার মানুষ। কিন্তু ঐন্দ্রিলা রূপকথার ফিনিক্স নয়, গল্পের প্রেরণা নয়.. ঐন্দ্রিলা শর্মা রক্তমাংসের মানুষ... জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করেও যাঁকে হার মানতে হল মৃত্যুর কাছে। ঐন্দ্রিলা আর নেই। আর ফিরবে না কখনও।


গত  নভেম্বর হঠাৎ দুঃসংবাদ। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সংকটজনক ঐন্দ্রিলা। হাওয়ার মতো খবর ছড়িয়ে পড়ল বটে, তবে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছিলেন অনেকে। দু-বার ক্যানসার জয়ী অভিনেত্রী ফের হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যেন মানুষের মনে এই বিশ্বাস গেঁথে দিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলাকে এত সহজে ছুঁতে পারবে না মৃত্যু। সময় পেরিয়েছে.. ঐন্দ্রিলার লড়াই চলেছে হাসপাতালের বিছানায়। আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সমানভাবে লড়াই করেছে তার পরিবার আর প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)। শরীরের সঙ্গে লড়াইয়ের চেয়ে কিছু কম কঠিন ছিল না মনের সঙ্গে লড়াই। 


ঐন্দ্রিলার অবস্থা সংকটজনক দেখেও আশায় বুক বেঁধেছিল পরিবার, প্রেমিক। সেই আশায় ভর করেই সব্যসাচী লিখেছিলেন, 'নিজের হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম, নিজের হাতে ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব। এর অন্যথা কিছু হবে না।' কিন্তু এই পোস্ট লেখার ১০ দিনের মাথাতেই কি সব্য়সাচী বুঝতে পেরেছিলেন, অন্যথা হতে পারে তাঁর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার? প্রথমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালবাসার মানুষের স্বাস্থ্যের কোনও খবর দেননি, জানাননি কেমন আছে। কেবল লিখেছিলেন প্রার্থনা করতে। প্রার্থনা মৃত্যুকে জয় করতে পারে... এই বিশ্বাস ছিল সব্যসাচীর। সেই বিশ্বাসে ঐন্দ্রিলার কাঁধে, তাঁর পরিবারের কাঁধে, সব্যসাচীর কাঁধে হাত রেখেছিল গোটা টলিউড। সাধারণ মানুষেরও। ঐন্দ্রিলা ফিরবেই.. এই বিশ্বাসে ভর করে, হাতে হাত রেখে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করেছিলেন সকলে। কিন্তু কিন্তু গতকাল সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সমস্ত পোস্ট মুছে ফেলেন সব্যসাচী। তিনি কি বুঝেছিলেন ঐন্দ্রিলাকে আগের মতো করে ফিরে পাবে না কেউই? সবার স্নেহের সেই বাঁধন ছাড়িয়ে, ভালবাসা ডিঙিয়ে ঐন্দ্রিলা অনেক দূরে পাড়ি দিলেন.. নাকি অনিচ্ছা করেই চলে যেতে হল তরুণী নায়িকাকে? তাঁর মধ্যে ছিল অফুরন্ত জীবনীশক্তি.. ঐন্দ্রিলা চলে যেতে চাননি.. মরতে চাননি।


ঐন্দ্রিলা হয়তো থেকে যাবে ক্যামেরার ফ্রেমে, পুরনো ছবিতে, আমাদের মনে... শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে হয়.. শিখিয়ে যাবেন আগামী দিনেও। কেবল নতুন গল্পেরা.. চরিত্রেরা.. লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশনেরা আর পাবে না ঐন্দ্রিলাকে। কত না বলা গল্প যে রয়ে গেল.. ঐন্দ্রিলা নিজেও জানলেন না।