কলকাতা: পর্দায় শেষবারের মতো বাবাকে হেঁটে চলে বেড়াতে দেখা, হাসতে-কাঁদতে দেখা... তাঁর মত সংযত মানুষকেও চুপ করিয়ে রাখতে পারেনি। আজ মুক্তি পেয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)-স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের (Swatilekha Sengupta) ম্যাজিক জুটির শেষ ছবি, 'বেলাশুরু' (Belashuru)। আর সেই ছবি দেখেই যেন আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না সৌগত চট্টোপাধ্যায় (Sougata Chatterjee)। 'বেলাশুরু' নিয়ে অনর্গল সৌমিত্র পুত্র।


বেলাশুরু ঠিক যেন একটা সুন্দর কবিতা


সৌগত লিখছেন, আমি 'বেলাশুরু'র মধ্যে একটা সুন্দর কবিতা পেয়েছি। এই সিনেমাটা যেন এমন একটা কবিতা যা জীবন থেকে উঠে এসেছে। ছবির বিভিন্ন চরিত্র এবং তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন আমার মন ছুঁয়েছে। মানব জীবনের যে জটিলতা, তা এই প্রত্যেক চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমার সবার অভিনয়ই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে চমৎকার লেগেছে। এতদিন পরে বাবার একটা ছবি দেখলাম। এটা বাবার একেবারে শেষদিকের কাজ। খুব ভালো লাগল বাবাকে দেখে। এই ছবির কাহিনিকে বিশ্বনাথ আর আরতির যে দাম্পত্য প্রেম, সেটা একটা পরিণত বয়সের প্রেম। আর তাই সেটা অনেক বেশি সম্পূর্ণ, গভীর আর খুব সফলভাবে এই দুই অভিনেতার দ্বারা রুপায়িত হয়েছে। অ্যালজাইমার্স নিয়ে তো আমাদের দেশে সিরিয়াস ছবি বেশি হয়নি। আমার নিজের পরিবারেও ঠাকুরমার অ্যালজাইমার্স ছিল তাই আমি কিছুজনকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অ্যালজাইমার্স একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ছবিতে আরও একটা দিক এসেছে যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা হল এইরকম রোগীদের খেয়াল রাখা, কী ভাবে তাদের যত্ন নিতে হয় এইগুলো। আমার মনে হয়, মানুষের মনে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে এই ছবি। আশা করি এই ছবিটা দেখার পরে যে সব মানুষ অ্যালঝাইমার্সে ভুগছেন তাদের পাগন নাও ভাবতে পারেন। তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করতে পারেন হয়তো। এই ছবির আরও একটা দিক হচ্ছে বিশ্বনাথ তাঁর স্ত্রীকে বোঝার চেষ্টা করছে এবং তার এই সমস্যাটার সঙ্গে সমব্য়থী, সে চেনার চেষ্টা করছে প্রত্যের পদে। সে তার স্ত্রীকে খাইয়ে দিচ্ছে।


আরও পড়ুন: Bagheera: পরবর্তী ছবি 'বাঘিরা' নিয়ে তৈরি 'কে জি এফ: চ্যাপ্টার ২' পরিচালক প্রশান্ত নীল


আমার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে যখন ওনারা ফরিদপুরে গেলেন সেই দৃশ্যগুলো। কারণ সেটা তো আমাদের গোটা বাঙালি জাতীরই ফেলে আসা অতীত। একটা সময় তো পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গই ছিল। তা পরে বাংলাদেশ হয়েছে। দুটো তো একই দেশ। সেই যে আমরা আমাদের অতীতকে অনেকেই ফেলে এসেছি পূর্ববঙ্গে। আমাদের পরিবারেও বহু মানুষ পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছেন। তাই খুব নাড়া দেয়। যখন নদীর ওপর দিয়ে ওরা সবাই নৌকো করে যাচ্ছে তখন ওখানে একটা বাচ্চা ছেলে গান গাইছে। ওই গান এবং ওই দৃশ্যটা সত্যিই অপূর্ব। আমার মনে হয় অভিনয় সম্পর্কে জানতে গেলে, বাবা এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের মত এমন শক্তিশালী অভিনেতাদের কাজ প্রত্যক্ষ করতে বেলাশুরু দেখা অতি আবশ্যক।' (অপরিবর্তিত)


'বেলাশুরু'-র সফর শুরু আজ থেকে। সৌমিত্র-স্বাতীলেখার নস্ট্যালজিয়ায় ভেসে লম্বা দৌড়বে এই ছবি, আশা শিবপ্রসাদ-নন্দিতার।