নয়াদিল্লি: সম্প্রতি ট্যুইটারে 'দ্য কেরালা স্টোরি' (The Kerala Story) প্রসঙ্গে খোলা চিঠি লিখলেন 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' (The Kashmir Files) পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী (Vivek Agnihotri)। তাঁর দীর্ঘ পোস্টের একটি অংশে তিনি ছবির পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনেত্রীকে সম্বোধন করে লেখেন, 'এই সাহসী চেষ্টার জন্য কুর্নিশ, কিন্তু এরপর থেকে আপনাদের জীবন আর আগের মতো থাকবে না। অত্যন্ত ঘৃণার সম্মুখীন হবেন।'


'দ্য কেরালা স্টোরি' প্রসঙ্গে বিবেক অগ্নিহোত্রীর খোলা চিঠি


'আমি মহান চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সিনেমা সমালোচকদের থেকে শুনে বড় হয়েছি যে শিল্পের একমাত্র উদ্দেশ্য হল মানুষকে তাঁদের নিজস্ব বিশ্বাস এবং পক্ষপাত নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য জাগ্রত করা। আমি এও শুনে বড় হয়েছি সিনেমা সমাজের আসল সত্যকে প্রতিফলিত করে। আমাকে বলা হয়েছিল যে পুরনো ঈশ্বরকে ধ্বংস করে নতুন ঈশ্বর গড়ে তোলাই সিনেমার ধর্ম। এটি একটি অলিখিত নিয়ম যে দুষ্ট যখন খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন শিল্পীর ধর্ম তাঁর শিল্প দিয়ে সেটা প্রকাশ্যে আনা। আমি কি তবে ভুল শুনেছি?' 


'দ্য কেরালা স্টোরি' নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, সেই আবহে ট্যুইটারে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। প্রসঙ্গত, তাঁর পরিচালিত 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'ও অজস্র বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছিল। 


শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় যে দীর্ঘ পোস্ট বিবেক অগ্নিহোত্রী করেন, তাতে বর্তমান সমাজের একাংশের প্রতি প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিবেক লেখেন, 'শিল্প সংক্রান্ত এই চিন্তা সঠিক। কিন্তু যাঁরা এগুলো বলেছিলেন তাঁরা ভুল মানুষ। তাঁরা বাক-স্বাধীনতার কথা বলেন কিন্তু সেন্সরশিপের পক্ষ নেন। তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন কিন্তু ‘অন্য’ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের চর্চা করেন। তাঁরা মানবাধিকারের কথা বলেন কিন্তু সন্ত্রাসী ও নকশালদের সমর্থন করেন। তাঁরা খারাপকে প্রকাশ্যে আনার কথা বলেন কিন্তু আসল সত্যিকে ঢেকে রাখতে চান।' তাঁর কথায়, 'আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে আধুনিক সময়ে সিনেমার সেই কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে যা মিডিয়া এবং রাজনীতি করতে পারে না। এটি অস্বস্তিকর বাস্তবতা উপস্থাপন করতে পারে, ইতিহাসকে সংশোধন করতে পারে, সংস্কৃতি যুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং বৃহত্তর স্বার্থে একটি জাতির নরম শক্তিতে পরিণত হতে পারে।'


তাঁর মতে ভারতে সিনেমা তৈরি করা সহজ নয়। নিজের 'বুদ্ধা ইন এ ট্রাফিক জ্যাম', 'দ্য তাশকেন্ত ফাইলস' ও 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' ছবিগুলির উদাহরণ টেনে বলেন, 'আমাকে শারীরিকভাবে, কাজের ক্ষেত্রে, সামাজিকভাবে, মানসিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে।' এমনকী তাঁর আগামী ছবি 'দ্য ভ্যাকসিন ওয়ার' নিয়েও তাঁকে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে দাবি পরিচালকের। বিবেক অগ্নিহোত্রীর দাবি, 'কিছু নির্দিষ্ট লবি এবং মৌলবাদীদের দ্বারা আমার জীবন নরকতুল্য করে দেওয়া হয়েছে।'


সবশেষে বিবেক অগ্নিহোত্রী লেখেন, 'প্রিয় বিপুল শাহ, সুদীপ্ত সেন, আদাহ্ শর্মা ও গোটা 'দ্য কেরালা স্টোরি' টিম, প্রথমেই তোমাদের সাহসী প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে তোমাদের একটা দুঃসংবাদও দিয়ে রাখি, যে এখন থেকে তোমাদের জীবন আর আগের মতো থাকবে না। অভাবনীয় ঘৃণার সম্মুখীন হতে হবে তোমাদের। শ্বাসকষ্ট হবে। অনেক সময়েই খুব বিভ্রান্ত এবং হতাশ মনে হবে। কিন্তু মনে রাখবে, ঈশ্বর সেই কাঁধকে পরীক্ষা করে নেন যাঁর উপর তিনি পরিবর্তনের বাহক হওয়ার দায়িত্ব দিতে পারেন। যদি নিজের ধর্মের পথ অনুসরণ করার পথ সিনেমা হয়, তাহলে থেমো না। ভারতীয় গল্পকারদের সম্প্রদায় বৃদ্ধি পেতে দাও। নতুন, তরুণ প্রতিভাবান, ভারতীয় গল্পকারদের সাহায্য করো। এই ভারতীয় নবজাগরণ একটি নতুন ভারতের পথপ্রদর্শক আলো হয়ে উঠুক।'


 






দীর্ঘ খোলা চিঠির শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে পরিচালক লেখেন, 'এবং যখনই মনে হবে যে তোমাকে কেউ বুঝছে না, গুরুদেবের বাণী মনে রেখো - একলা চলো রে।'


আরও পড়ুন: Summer Drinks: গরমে কোন সরবতগুলি না খেলেই নয় ? কোনগুলি খুবই স্বাস্থ্যকর ?


প্রসঙ্গত, 'দ্য কেরালা স্টোরি' নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক। একাংশের মতে এটি একটি 'প্রোপাগান্ডা' ছবি, অপর একাংশের মতে এই ছবি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। তবে সেইসব বিতর্ক পেরিয়েও বক্স অফিসে ভালই ব্যবসা করছে এই ছবি।