কলকাতা: প্রতিবছর দুর্গাপুজোয় মহালয়ার দিন থেকেই চণ্ডীপাঠ হয় চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। রথের দিনই কাঠামো পুজো হয়ে যায় অভিনেত্রী সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। এ বছরটা সবদিক থেকেই তো আলাদা। করোনা ওলট-পালট করে দিয়েছে সবকিছুই। তার উপর আবার আশ্বিন মলমাস। মহালয়া আর পুজোর মাঝে লম্বা ফারাক! এ বছর তাই মহালয়ায় চক্ষুদান হয়নি দেবী দুর্গার, বললেন সুদীপা। শুরু হয়নি প্রথা মেনে চণ্ডীপাঠও। পুজোর ঠিক ৭ দিন আগে থেকেই চট্টোপাধ্যায় পরিবারে চণ্ডীপাঠ হবে। তবে রথাযাত্রায় কাঠমো পুজো হয়েছে রীতি মেনেই।

এবারের পুজো কি অন্যান্য বারের থেকে একটু আলাদাই হবে? পুজোর রীতি বা আয়োজনে বড় একটা ফারাক না থাকলেও সপ্তমীর নবপত্রিকা স্নান হবে বাড়িতেই। 'অন্য কোনও কারণে নয়, বাড়ির মেয়েকে (নবপত্রিকা তো মায়েরই রূপ) করোনাকালে বাইরে যেতে দেব কেন? বাড়ির ছোট ছাদেই হবে কলাবউ স্নান। তারপর বেনারসির ছাতায় ঢেকে, পাখার বাতাস পেয়ে কলাবউ আসবেন ঘরে। যদিও গঙ্গায় একডুবে ঘট ডোবানোর রীতিতে কোনও অন্যথা হবে না। ', জানালেন সুদীপা।
ঢাকা বিক্রমপুরে অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি। পুজো প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো। অগ্নিদেবের কলকাতার বাড়িতে এই নিয়ে ৯ বছর পুজো হতে চলেছে।



তবে পুজোর রীতিনীতি-আবেগ একেবারেই কলকাতার প্রাচীন পুজোগুলোর মতোই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনন্যতার দাবি রাখে সুদীপা-অগ্নিদেবের পুজো। সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে মা সেজে ওঠেন অনেক অলংকারে। গলা থেকে পা অবধি লম্বা সীতাহারে দামী রত্নের বাহার। নাকে হীরের কমল নাকছাবি। জরোয়ার ময়ূর ব্রোচ। আরও কত কী। প্রতি বছরই দেবীর নতুন কোনও অলংকার গড়ানো হয়। তবে সব গয়নাই মা পঞ্চমীতে পরেন না। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বিশ্বাস, সপ্তমীতে জামাই-মহাদেব আসেন শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি চলে গেলে বাড়ির মেয়েকে সব গয়না পরিয়ে দেওয়া হয়। দশমীতে ফুলের সাজে হয় মায়ের বিসর্জন।

চট্টোপাধ্যায় পরিবারে মা-কে প্রতিদিন অন্ন ভোগ নিবেদন করা হয়। প্রতিদিনের ভোগেই আছে বিশেষত্বের ছোঁয়া। সপ্তমীতে গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি দেওয়া হয় দেবীকে। অষ্টমীতে রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল দিয়ে ভোগ রাঁধা হয়। চট্টোপাধ্যায় বাড়ির সন্ধিপুজো হয় মহা সমারোহে। তারপর থেকে নবমী অবধি দেবীকে নিবেদন করা হয় শুধুমাত্র ঢাকার চিনিগুঁড়া চালের মাখা পোলাও ভোগ। 'সীমান্তের ওপার থেকে কীভাবে যেন মা নিজেই আনিয়ে নেন এই চাল। আর তা কোনওদিন কিনতে হয় না। প্রতি বছরই ঘটে কোনও-না-কোনও সংযোগ। ঠিক যেমনটা ঘটল এবার।' বলছিলেন সুদীপা।

এই ভোগের চাল জোগাড় নিয়ে এক আশ্চর্য গল্প শোনালেন সুদীপা। 'এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকা গিয়ে চাল আনা সম্ভব ছিল না। ক্যুরিয়রও আসছে না। প্লেন চলাচলও স্বাভাবিক নয়। একপ্রকার হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম আমরা। ভাবলাম মায়ের বুঝি এই ইচ্ছে। এরপর দিনকয়েক আগে অনুষ্ঠানের শ্যুটিংয়ে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন বাংলাদেশ হাই কমিশনারের স্ত্রী। তিনি বেরনোর সময় হঠাৎই বললেন, তোমার কিছু লাগবে সুদীপা? আমার গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠল। বুঝলাম মা দুর্গা এবার ওঁর মারফতই নিজের চাল আনিয়ে নেবেন। '



দশমীতে মায়ের ভোগ হয় সিদ্ধ চালের পান্তা। সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা, কচু শাক ও শাপলার টক। এরপর ধুনোর ধোঁয়ায় মায়ের চোখ জুড়ে নেমে আসে ঘুম, এমনটাই বিশ্বাস সুদীপাদের।



নবমীতে আমিষ ভোগে থাকে নিরামিষ মাংস। রান্না হয় কালীঘাটের গাওয়া ঘি দিয়ে। সেই দিনই বহুজন নিমন্ত্রিত থাকেন সুদীপার বাড়িতে। টলিউডের সব কাছের মানুষদের আমন্ত্রণ থাকে। এবার সেই তালিকা একটু ছোট হলেও আয়োজনে ঘাটতি থাকবে না। দূরত্ববিধি ও করোনা সুরক্ষাবিধি মেনেই হবে পুজো থেকে অতিথি আপ্যায়ণ।
'দেবী তো বাড়ির মেয়ের মতোই। তাই অস্ত্রশস্ত্রও স্যানিটাইজ করা হবে। মালা পুজোর পর বদলে দেওয়া হবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে।' , বললেন সুদীপা।



এবার সুদীপা-অগ্নিদেবের ছেলে ছোট্ট আদিদেবের দ্বিতীয় বার পুজো দেখা। তাই সে-ও তৈরি অত্যন্ত আনন্দে। তার জন্য এসেছে ছোট্ট ঢাক। তাই নিয়ে এখন থেকেই খুব উত্তেজিত সুদীপার সুপুত্তুর।