জয়পুর:  যতই কাছে এগোচ্ছে সঞ্জয় লীলা বনশালি পরিচালিত ‘পদ্মাবতী’র মুক্তির দিন, ততই তুঙ্গে উঠছে ছবিকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের ঝড়। ছবির শ্যুটিং শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকবার নানা শহরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে ছবির সেটে, সেসময় জখম হয়েছিলেন পরিচালক বনশালিও। কিন্তু তাতেও থামেনি হুমকি। এবার ছবি এবং ছবির অভিনেতা, অভিনেত্রী এবং পরিচালকের উদ্দেশ্যে সুর চড়ালো কট্টরপন্থী রাজপুত সংগঠন  করণী সেনা। ওই সংগঠনের নেতা মহিপাল সিংহ মাকরানা ছবিতে পদ্মাবতীর চরিত্রে অভিনয় করা দীপিকা পাড়ুকোনের নাক পর্যন্ত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আগামী ১ ডিসেম্বর সারা দেশজুড়ে ভারত বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই দিনই ‘পদ্মাবতী’ মুক্তি পাওয়ার কথা পর্দায়।



করণী সংগঠনের নেতা একটি ভিডিও প্রকাশ করে বলেছেন, রাজপুতরা কখনও কোনও মহিলার গায়ে হাত তোলেন না, কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে লক্ষ্ণণ যেমন সূর্পণখার নাক কেটে নিয়েছিলেন, ঠিক তেমন তাঁরা দীপিকার নাক কেটে নিতেও পিছপা হবেন না। সংগঠনের আরেক সদস্যের দাবি, তাঁরা ছবি মুক্তির প্রতিবাদে জমায়েত করবেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের পূর্বপুরুষরা রক্ত দিয়ে দেশের ইতিহাসে তৈরি করেছিলেন। সেটাকে কালিমালিপ্ত করার অধিকার তাঁরা কাউকে দেবেন না।

অপর এক কট্টরপন্থী সংগঠন রক্ত দিয়ে সই করে একটি আবেদনপত্র সেন্সর বোর্ডে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁদেরও দাবি, ছবিটি যেন কোনওভাবেই মুক্তির ছাড়পত্র না পায়। তবে কোনও একটি, দুটি সংগঠন নয়, একাধিক সংগঠন রয়েছে, যারা ছবিটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। প্রত্যেকেরই দাবি, ছবিটি যেন কোনওভাবেই মুক্তি না পায় পর্দায়।

রাজস্থানের বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, ছবিতে ইতিহাসকে বিকৃত করে দেখানো হয়েছে। ছবিতে রানি পদ্মীনির সঙ্গে সম্রাট আলাউদ্দীন খিলজির প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ অসত্য বলে একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেছেন বনশালি। তবে তাতে তেমন কোনও লাভ হয়নি। এমনকি করণী সেনার সদস্যরা পর্যটকদের চিত্তরগড় দূর্গে প্রবেশে পর্যন্ত বাধা দেবে বলে হুমকি দিয়েছে, যদি তাদের দাবিদাওয়া আগামী ১৭ নভেম্বরের মধ্যে না মেটানো হয়। ইতিহাসের পাতায় কথিত আছে, ১৪ শতকে ওই দূর্গে থাকতেন রানি পদ্মীনি।

তবে রাজস্থানের বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভের মাঝেই সেখানকার সরকার একাধিকবার প্রত্যেক দলকে অনুরোধ জানাচ্ছে, তারা যেন আইন নিজেদের হাতে না নেয়। অথচ, ঘুরিয়ে 'পদ্মাবতী' ছবির বিরোধিতা করল বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার। কেন্দ্রকে তারা জানাল, ‘পদ্মাবতী’ মুক্তি পেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আদিত্যনাথ সরকারের দাবি, যেভাবে ঐতিহাসিক তথ্য ছবিতে বিকৃত করে দেখানো হয়েছে, তা নিয়ে জানমানসে ক্ষোভ রয়েছে। সেখানকার সরকারের উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকে একটি চিঠি দিয়ে বলেছেন, সেন্সর বোর্ড সদস্যরা যেন মানুষের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই, ছবি সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়।