তোর্ষা ভট্টাচার্য্য়, কলকাতা: 'আমি 'অর্ধাঙ্গিনী' শব্দবন্ধে বিশ্বাসই করি না। আর তাই এই ছবিটা বানিয়েছি...' নতুন ছবি নিয়ে কথা এই শব্দবন্ধ দিয়েই শুরু করলেন তিনি। 'অর্ধাঙ্গিনী'-র পরিচালক। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly)। ছবি মুক্তির আগের রাতে, ছবির কথা, ছবির বাইরের কথা.. এবিপি লাইভের (ABP Live)-এর কাছে উজাড় করে দিলেন পরিচালক। 


'অর্ধাঙ্গিনী' কথাটায় বিশ্বাস সেই কৌশিকের। পরিচালক বলছেন, 'আমার কাছে স্ত্রী পূর্ণাঙ্গিনী। তাকে শুধু অর্ধেকটুকু দিয়ে আমি কখোনোই সন্তুষ্ট রাখতে পারি না। একটা সংসারে পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান অনেক বেশি থাকে, সেটা আমরা ইগোর জন্য স্বীকার করি না। এটা আমি পুরুষ বা নারীবাদী বলে বলছি না, একজন মানুষ হিসেবে বলছি, নারীর বন্ধু হিসেবে বলছি। সম্পর্কে কিছু অর্ধেক হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না।'


'অর্ধাঙ্গিনী'-তে নাকি কোনও অভিনেতা অভিনেত্রীকেই অভিনয়ের ক্ষেত্রে পরিচালনা করেননি কৌশিক? প্রশ্ন রাখতেই একটু হেসে সেকথা মেনে নিলেন খোদ পরিচালকও। বললেন, 'কথাটা ঠিক। এই ছবিতে কেবল টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ছাড়া আমার কাউকে পরিচালনা করার প্রয়োজনই হয়নি। এত তুখোড় অভিনেতা, অসাধারণ ব্যক্তিত্বরা এই ছবিতে রয়েছেন, তাঁদের আর অভিনয় শেখানোর দরকার পরে না। মনিটরে বসে কেবল মুগ্ধ হয়ে আমি দেখেছি। বিশেষ করে চূর্ণী এবং জয়াকে। দেখেছি দুজন পরিণত অভিনেত্রী ঠিক কী কী করতে পারে। এই সুযোগ সব ছবিতে পাওয়া যায় না। তাঁরা বিখ্যাত হোক বা না হোক, অনেক সময়েই অভিনয় দেখিয়ে দিতে হয়। অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে বড় বড় অভিনেতাদের এমন অভিনয় করতে দেখা যেমন একদিকে আনন্দের, অন্যদিকে শিক্ষারও। ছবিটা দেখলে দর্শক বুঝতে পারবেন, কেন কথাগুলো বলছি। এই ছবি পরিচালনা করা আমায় ভীষণ তৃপ্তি দিয়েছে।'


একটা ছবি থেকে অন্য ছবির গল্পকে আলাদা সুরে বাঁধেন কৌশিক। এই তারতম্যের জন্য কী বিশেষ চর্চা প্রয়োজন? কৌশিক বলছেন, 'ছবির বিষয়বস্তুর পরিবর্তনটাই হচ্ছে একমাত্র আয়ু। আমার সব ছবির গল্প, চরিত্র, তাদের অতীত, পোশাক, সজ্জা সবকিছু যদি এক হয়ে যায়... তাহলে আমি কতগুলো ছবি বানালাম, তাতে কিছু যায় আসে না। আমারও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কিছুটা পারব, কিছুটা পারব না। আর আমি আমার জন্মলগ্নে কাউকে কথা দিইনি যে আমি সবকটা অসামান্য ছবি বানাব। আমার যে গল্প বলতে ভাল লাগে, সেই গল্প পর্দায় বলি। তবে খেয়াল রাখি, আমার ছবি যেন যুগোপযোগী হয় আর সমাজকে যেন একটা কোনও বার্তা দিয়ে যায়। জীবিকার জন্য দেড়-দু কোটি টাকা খরচ করে একটা অবান্তর বিনোদনের জিনিস বানাতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি, দেড় দু কোটি টাকা খরচ করে মানুষের মনে যদি অনুরণন যা সৃষ্টি করতে পারি, যদি খবর না পৌঁছে দিতে পারি, তবে সেই ছবি আমার কাছে অর্থহীন। ছবি বানানোর ক্ষেত্রে এটা ভীষণ মাথায় রাখি। চেষ্টা করি সিনেমাটা কীভাবে উপযোগী হয়ে উঠবে, মানুষের কাজে লাগবে।'


প্রাক্তন ও বর্তমান স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েন পর্দায় তুলে ধরবে 'অর্ধাঙ্গিনী'। সম্পর্কের বিভিন্ন দিক দেখানোর ক্ষেত্রে বাংলা ছবি কী আরও সাহসী হচ্ছে? পরিচালক বলছেন, 'ত্রিকোণ প্রেমের গল্প চিরকালই ছিল। কিন্তু বিষয়বস্তুর ভিন্নতার কারণেই এত ছবি এই বিষয়ের ওপর তৈরি হয়েছে। তবে  ২ ঘণ্টার ছবি দিয়ে সমাজের চিন্তাধারা বদলানো যায় বলে আমি বিশ্বাস করি না। ছবিটা দেখে বেরনোর পরে যদি তার রেশ কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন দর্শকের মনে লেগে থাকে, সেখানেই তার সাফল্য।'


'কাবেরী অন্তর্ধান'-এর সময় 'পাঠান'-এর সঙ্গে বক্সঅফিসে লড়াই করতে হয়েছিল। এই ছবির ক্ষেত্রে কতটা আশাবাদী কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়? পরিচালক বলছেন, ''কাবেরী অন্তর্ধান'-এর সময় প্রথম দুটো সপ্তাহে ধাক্কা খেলেও আমাদের কালেকশন ভালোই হয়েছিল। এবারও তো 'জওয়ান' মুক্তির কথা ছিল। শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan) এবার আমাদের ওপর দয়াই করলেন। সেই ছবির মুক্তি পিছিয়ে গিয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস, ছবিকে বক্সঅফিস কালেকশন বাঁচিয়ে রাখে না, বাঁচিয়ে রাখে তার মূল্যবোধ।'