কলকাতা: ৩১ মে, ২০২২। রাতের দিকে হঠাৎই খবর মেলে প্রয়াত তারকা গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ (Krishnakumar Kunnath) ওরফে কেকে। তাও কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসে। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে খবর। আচমকা ছন্দপতন বিনোদন দুনিয়ায় (KK Death News)। গায়কের পরিবারের সঙ্গে একইভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা দেশ। গায়কের প্রয়াণ হঠাৎ কেউই মেনে নিতে পারেননি। এই শহরের এক কলেজের অনুষ্ঠানে এসে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, এরপরই সেই দুঃসংবাদ। আজ আরও এক ৩১ মে। সেই মর্মান্তিক দিনের ২ বছর পার। পৃথিবী থেকে কেকের শরীর বিদায় নিয়েছে ২ বছর আগে, কিন্তু এখনও তাঁর শিল্পসৃষ্টি সেই প্রথম দিনের মতোই টাটকা অনুরাগীদের মনে। এই দিনে যেন ফের একবার মন বলে ওঠে, 'অলভিদা' বড্ড তাড়াতাড়ি বললেন শিল্পী। আজকের দিনে ফিরে দেখা যাক শিল্পীর এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলা কিছু কথা, কীভাবে কোনও গানের মধ্যের আবেগ তুলে ধরতেন তিনি? কীভাবে নিজের গানের মাধ্যমে সারিয়ে তুলতেন শ্রোতামনের ব্যথা? ডুব দেওয়া যাক তাঁর স্মৃতির সাগরে...


কীভাবে যন্ত্রণার সঙ্গে মোকাবিলা করতেন কেকে?


কয়েকবছর আগে দুবাইয়ে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে শিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নথ মুখোমুখি হন 'ফিল্মফেয়ার মিডল ইস্ট'-এর। আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়, গান বেছে নেওয়ার ধরনের মতো একাধিক বিষয়। পেশায় চিকিৎসক হওয়ার দিকে এগোচ্ছিলেন কেকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেশাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। তবে এই পেশাতেও ডাক্তারির উদ্দেশ্য খানিক হলেও যে সফল করতে পেরেছেন সেই কথা নিজেই বলেন তিনি। হাতে স্টেথোস্কোপ বা ওষুধ নিয়ে নয়, তিনি মানুষের মন সারিয়েছেন গানের মাধ্যমে, বলা ভাল এখনও সেই সফর তাঁর চলছে। তাঁর সৃষ্টি, তাঁর গাওয়া গানে আজও মোহিত হন আট থেকে আশি। 


কথায় বলে কোনও গানের আবেগ দর্শকের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে, গায়ককে সেই গানটা রীতিমতো 'যাপন' করতে হয় বা যে যন্ত্রণা বোঝাতে গানটা লেখা হয়েছে সেটার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। সত্যিই কি তাই? এই বিষয়ে সাক্ষাৎকারে গায়ককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'যন্ত্রণার নানা স্তর থাকে। সবসময় সেটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আমি যদি অন্য কাউকে যন্ত্রণায় দেখি, আমি সেটার সঙ্গে একাত্ম হতেই পারি। যদি কাউকে দেখি সেই অবস্থায়, বা কিছু পড়ি, বা শুনি বা জানি, সেটা স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে প্রভাব ফেলবে। সেটা আপনার হৃদয়ে বা আত্মায় রয়ে যায়। ছাপ ফেলে যাবে। সেটা নিয়ে আমরা বিশেষ ভাবি না কারণ তাতে অবসাদ তৈরি হতে পারে। যেমন কোনও মজার জিনিস দেখে আমরা হাসি, আনন্দ পাই, তেমনই কোনও জিনিস নেতিবাচক প্রভাবও ফেলে।' 


তিনি এই প্রসঙ্গে তাঁর গাওয়া 'তড়প তড়প কে' গানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, 'এই গানের সময় আমার তো মন ভাঙেনি। আমি চিরকাল আমার স্ত্রী জ্যোতিকেই ভালবেসেছি। ১১ বছর বয়স থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি। তারপর আমাদের বিয়ে হয়, আমরা একসঙ্গেই থেকেছি। ফলে এই গানের জন্য আমার হৃদয়ে কোনও যন্ত্রণা ছিল এমন তো নয়। কিন্তু যেমন বললাম, এই সমস্ত আবেগ আমাদের চিরকাল ঘিরে থাকে। সেই কারণে শিল্পীকে গানটি নিয়ে কিছুক্ষণ বসতে হয়। গান অনুযায়ী নিজেকে সেভাবে ভেঙে সেই গভীরতায় গিয়ে গাইতে হয়। একদম ফ্ল্যাট গাওয়া যায় না, ওভাবে হয় না। সেই আবেগটা নিজের মধ্যে থাকতে হয়। যদি সেটা থাকে, আর তার সঙ্গে যদি নিজেকে একাত্ম করা যায়, তাহলেই... ব্যাপারটা অনেকটা মেথড অ্যাক্টিংয়ের মতো। নিজে কীরকম অনুভব করতাম ওই পরিস্থিতিতে, সেটা বুঝতে হয়, এবং সেটা সত্যি অনুভব করতে হবে। ওই জন্য অনেকেই বলেন আমার গান শুনে তাঁরা সেরে ওঠেন। কারণ আমি অনেক গান গাই না, আমি সেই গানই গাই যেটা আমার মনে হয় আমি কিছু দিতে পারব।'


আরও পড়ুন: 'Pherari Mon': অগ্নিকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরল তুলসি, পরমা-নিখিলের ষড়যন্ত্র ফাঁস হবে এবার?


২০২২ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কৃষ্ণকুমার কুন্নথ। তবে তাঁর গান আজও অনেককে 'সেরে উঠতে' সাহায্য করে। কেকে-র সেই সাক্ষাৎকারের কথা আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক, তাঁর মৃত্যুর ২ বছর পরেও। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে রইল শ্রদ্ধা। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।