কলকাতা: মুক্তি পেল আতিউল ইসলাম পরিচালিত আসন্ন ছবি 'চাতক'-এর (Chatak) চরিত্রদের প্রথম লুক। মূল গল্প আবর্তিত হয়েছে 'স্পার্ম ডোনেশন'কে (Sperm Donation) কেন্দ্র করে। 


অন্য ধারার গল্প নিয়ে হাজির 'চাতক'


'স্পার্ম ডোনেশন'- বর্তমান সমাজে এই বিষয়টা কারও অজানা না হলেও, আজও এই বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে চান না কেউই। তবে এবার এই রাখ ঢাক করা বিষয়টি নিয়েই চলচ্চিত্রের জগতে আসছে নতুন ছবি 'চাতক'। ছবির পরিচালনায় রয়েছেন আতিউল ইসলাম। ছবিটিতে তাঁর সঙ্গে সহ পরিচালনার কাজ করেছেন আসানসোলের ডি.সি.পি অংশুমান সাহা। ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে বিশ্বনাথ বসু, সমদর্শী দত্ত, সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা, মন্টু মল্লিক, অনুরাধা রায়, রবিশঙ্কর রবি, অনিন্দিতা সোম প্রমুখদের। স্পার্ম ডোনেশন ও  তার প্রভাব কীভাবে এক দম্পতির জীবনে পড়বে, সেই গল্পই দর্শকের সামনে তুলে ধরতে চলেছেন আতিউল ইসলাম। 


বর্তমানে অনেক দম্পতির কাছেই স্বাভাবিকভাবে সন্তান লাভ করা বেশ সমস্যার একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্ট্রেস এবং বিভিন্ন সামাজিক ও মানসিক চাপের ফলে এবং শারীরিক অক্ষমতার কারণে অনেক সময়েই স্বাভাবিক নিয়মে বাবা-মা হতে পারেন না বহু দম্পতি। কিন্তু সকলেই চান তাঁদের জীবনে স্নেহ এবং বাৎসল্যের প্রভাব আসুক, এবং তার থেকেই সকলে সন্তান কামনা করেন। ঠিক এই সমস্যারই  সমাধানের জন্য মানুষের পাশে এখন এসে দাঁড়িয়েছেন স্পার্ম ডোনাররা। তাঁরা তাঁদের বীর্য দান করেন, এবং তার জন্য কোনওরকম পারিবারিক সম্বন্ধ বা স্বার্থ তাঁরা দেখেন না। 


এই ছবিতেও এমনই একজন স্পার্ম ডোনারের কথা বলবেন পরিচালক আতিউল। একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী  নারী, উচ্চপদস্থ এক কর্পোরেট অফিসারকে বিয়ে করে অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ সুখী হলেও, তাঁর জীবনে একটা সময়ে গিয়ে বাৎসল্যের অভাব হয়ে পড়ে, এবং সেই কারণে তিনি সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েন। তখন নানা ভাবে জানা যায়, যে তাঁর স্বামী সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম। তাই, তিনি স্বামীর একপ্রকার অমত থাকা সত্ত্বেও স্বামীকে নিমরাজি করিয়ে স্পার্ম ডোনেশনের সাহায্য নেন, এবং তাতেই জন্ম হয় তাঁর সন্তানের। 


এই  নারীর ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা, এবং তাঁর স্বামীর চরিত্রে দেখা যাবে বিশ্বনাথ বসুকে। সন্তান জন্ম নেওয়ার পরবর্তীকালে সে বড় হলেও, তার গৃহ শিক্ষক হিসেবে আসেন নতুন এক মাস্টারমশাই, যে চরিত্রে অভিনয় করছেন সমদর্শী দত্ত। কিন্তু কাকতলীয় ভাবে জানা যায়, সমদর্শীই হচ্ছেন ছেলেটির জন্মদাতা পিতা। এই ঘটনার ফলে গল্পের কাহিনি কোন নতুন মোড় নেয়, এবং তার কী প্রভাব পড়ে এই তিনজনের জীবনে, সেই গল্পই শোনাবে আতিউল ইসলামের ছবি। ছবিটি মুক্তি পেতে চলেছে এই বছরেই।


সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শ্রাবণ। গান লিখেছেন দীপাংশু আচার্য্য, শ্রাবণ এবং সৃঞ্জয় মিত্র। ছবিতে রয়েছে মোট চারটি গান। গানগুলি গেয়েছেন অনুপম রায়, মোনালি ঠাকুর, ঈশান মিত্র, অংশুমান সাহা, ঈপ্সিতা মুখোপাধ্যায়, জয়ন্তী ভট্টাচার্য এবং শ্রাবণ।


আরও পড়ুন: Mamata Shankar Exclusive: 'প্রথমবার শেষের কবিত পড়ে মনে হয়েছিল, অমিত সৌমিত্রদা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না'


পরিচালকের বক্তব্য 


পরিচালক আতিউল ইসলাম বলেন, 'স্পার্ম ডোনেশন বিষয়টা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের সমাজে অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয়। এই বিষয়টা নিয়ে অধিকাংশ মানুষ কথা বলতে না চাইলেও, এই একটা বিষয়ের কারণেই যে কত সম্পর্ক প্রত্যেকদিন আমাদের সমাজে বেঁচে যায়, কত পরিবার তাঁদের জীবনে সন্তানের স্পর্শ পান, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও এই বিষয় নিয়ে বাংলা ছবিতে এর আগে কথাবার্তা হয়নি। তবে, আমার মনে হয় এই বিষয়টি নিয়েও অন্যান্য সামাজিক বিষয়ের মতোই চলচ্চিত্রে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ছিল। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই 'চাতক' ছবিটি তৈরি করা। আশা করি, এই ছবি আপনাদের ভাল লাগবে।'


অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কথায়


নিজের চরিত্র নিয়ে অভিনেত্রী সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা বলেন, 'আমার চরিত্রটি ভীষণই অন্যরকম। একদিকে সে যেমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তেমনই অন্যদিকে সে কেবলমাত্র একটা সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য, সমস্ত রকম উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সমস্ত রকমের ভাল থাকা, বিলাস বাসন ঝেড়ে ফেলে আর পাঁচজন মা হতে চাওয়া নারীর সমকক্ষ হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে তাঁর জীবনে নানান রকমের চড়াই উৎরাই আসে, এবং সেগুলো তাঁকে কোথাও গিয়ে একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বার্থপর মহিলা থেকে ধীরে ধীরে একজন নিঃস্বার্থ মা করে তোলে। এই সফরটাই এই চরিত্রের জন্য সবচেয়ে জরুরী ছিল।'


অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর কথায়, 'এই ছবি আমাদের সমাজের এমন এক সমস্যা  নিয়ে কথা বলতে চলেছে, যে বিষয় নিয়ে এর আগে বাংলা ছবিতে কথা বলা হয়নি। এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ। আশা করি এই ছবি আপনাদের সকলের ভাল লাগবে।'


অন্যদিকে সমদর্শী বলেন, 'এই ছবিতে আমি একজন স্পার্ম ডোনারের। আলাদা করে একজন স্পার্ম ডোনারের চরিত্রের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয় না ঠিকই, কিন্তু একজন স্পার্ম ডোনারের জীবনে যে কতটা ত্যাগ থাকতে হয়, কেবলমাত্র বায়োলজিক্যাল কানেকশন ছাড়া কোনওরকম ইমোশন না রেখেই কীভাবে তাকে তার কাজটা করতে হয়, সেই বিষয়টা আমার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠবে। আশা করি এই ছবি সকলের ভাল লাগবে।'