কলকাতা: তিনি বিভিন্ন রকমের চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে ভালবাসেন। ভালবাসেন চ্যালেঞ্জ নিতে। তিনি মনে করেন, শিল্পের হাত ধরেই করা যায় প্রতিবাদ, বলা যায় সমাজের এমন মানুষদের কথা, যাঁদের কথা বলা দরকার। যাঁদেরকে বোঝে না কেউ। তেমনই একটা গল্প 'কাবেরী'। যে ওয়েব সিরিজে তিনি অভিনয় করেছেন নামভূমিকায়, সেই সিরিজ বলে একটা মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। 'কাবেরী'-তে অভিনয় করতে গিয়ে, নিজেও কি বদলে গেলেন? অন্য চোখ দিয়ে সমাজকে বুঝলেন পাওলি দাম (Paoli Dam)? সেই গল্পই বললেন এবিপি লাইভ বাংলাকে (ABP Live Bangla)-কে।
'কাবেরী'-র নামভূমিকায় অভিনয় করার কেমন অভিজ্ঞতা ছিল পাওলির? অভিনেত্রী বলছেন, 'আমি এর আগে এমন চরিত্রে অভিনয় করিনি। প্রতিবাদী চরিত্রে অভিনয় করেছি বটে, তবে সেই চরিত্র স্বভাবতই প্রতিবাদী। এমন ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প নয়। কাবেরী একজন ভীষণ শান্ত মেয়ে, যার ভীষণ ধৈর্য্য, ভীষণ সহ্যশক্তি, কোন পরিস্থিতিতে গেলে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, কাবেরী সেই গল্পই বলে। সিরিজটা করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একটা কাবেরী রয়েছে। আমরা হয়তো কেউ তাদের বুঝতে পারি না। এই সমস্ত মানুষগুলোর কথা বলা খুব দরকার, যাঁরা নিজেদের জন্যই কথা বলতে পারেন না। যাঁদের নিজেদের স্বরটাই হারিয়ে গিয়েছে। কাবেরী ঠিক এমন একজন মানুষের গল্প যে নিজের জন্য ঘুরে দাঁড়াতে না পারলেও তার এক ছাত্রীর জন্য ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথম প্রথম এই চরিত্রটাকে মেনে নিতে আমার একটু অসুবিধাই হয়েছিল। কিন্তু যত এই চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করলাম, মনে হয় চরিত্রটাকে ধীরে ধীরে ভালবেসে ফেলছি। কাবেরীর মধ্যে এমন এমন একটা মাতৃসত্ত্বা রয়েছে যে সবকিছু ক্ষমা করে দিতে পারে। এই চরিত্রটা করতে গিয়ে যেন আমারই ধৈর্য্য বেড়ে গেল। আর একটা কথা না বললেই নয়, পুরুষতান্দ্রিক সমাজকে নতুনভাবে চিনেছি। আমরা তো পুরুষদের ওপরেও কিছু দায়ভার চাপিয়ে দিই.. যেমন তাদের রোজগার করতেই হবে। কাবেরীর স্বামী অনীশেরও একটা তেমন প্রেশার রয়েছে যে কারণে সে বাড়িতে এসে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। পুরুষের খারাপ ব্যবহারের পিছনেও থাকে সেই সমাজের চাপ। তবে কেউ কারোও ওপর সমাজের চাপ রয়েছে বলেই সে অন্য আরেকটি মানুষকে হেনস্থা করতে পারে না। সমাজের মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখা জরুরি।'
বর্তমানে অস্থির এক সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে বাংলা। সেই সময়ে 'কাবেরী'-র মতো ওয়েব সিরিজ কতটা জরুরি বলে পাওলি মনে করেন? অভিনেত্রী বলছেন, 'যখন আমরা এই সিরিজটা শ্যুট করেছি, জানতাম না এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাব। আমার মনে হয়, কাবেরী-ও তো ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পই বলে। নারীশক্তির গল্প বলে। মানুষ যদি সিরিজটা দেখে নিজের জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে পান, তাহলে আমাদের ভাল লাগবে। খুব খেটে, সবাই মিলে পরিশ্রম করেই কাজটা করা। 'হইচই'-এর সঙ্গে আমার এটা প্রথম কাজ, তাই খুব স্পেশাল।'
টলিউডের কর্মক্ষেত্রে বারে বারে প্রশ্ন উঠছে নারীসুরক্ষা নিয়ে। পাওলি মনে করেন টলিউডে নারীদের কাজ করার পরিবেশ নেই? অভিনেত্রী বলছেন, 'একটা ফোরাম গঠন করা হয়েছে টলিউডে, আমিও স্বাক্ষর করেছি। একসঙ্গে কাজ করতে গেলে অনেক রকম সমস্যাই হতে পারে। কিন্তু সেই সমস্যা জানানোর জন্য যদি একটা ফোরাম থাকে, তাহলে সমস্ত মহিলারা ভয় না পেয়ে এসে নিজের সমস্যাগুলো জানাতে পারবেন। আমি এমন একটা সময়ে কাজ শিখেছি, যেখানে এই ভয়ের পরিবেশ ছিল না। এমন এমন পরিচালকের সঙ্গে কাজ শিখেছি, যাঁরা যত্ন করে, হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন আমাদের। আমি চাই টলিউডে আবার সেই পরিস্থিতিই ফিরে আসুক। সেটে যদি কোনও মেয়ে ক্রমাগত ভয় পেতে থাকে, তাহলে তো নিজের কাজটাই করতে পারবেন না। আমাদের নতুন প্রজন্মকে আমাদেরই পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে কাজ করার।'
'কাবেরী'-র মতো ওয়েব সিরিজ কেন বেছেছিলেন পাওলি? অভিনেত্রী বলছেন, 'আমি এমন এমন চরিত্র বেছে নেওয়ার চেষ্টা করি যাঁরা নারীশক্তির কথা বলে, মেয়েদের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলে। তা সেই 'কালী' হোক বা 'কাবেরী'। আমি মনে করি আমি একজন শিল্পী, সমাজকর্মী নই। আমি প্রতিবাদ করব, মনের ভাব প্রকাশ করব, মেয়েদের কথা বলব আমার কাজের মাধ্যমে। কাজই হবে আমার প্রতিবাদের ভাষা। আমার চরিত্ররাই আমার হয়ে কথা বলবে, প্রতিবাদের বার্তা দেবে।'
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।