তোর্ষা ভট্টাচার্য্য, কলকাতা: বন্ধুর মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন দূরাভাষে। মুম্বইতে বসে। কাজে আটকে থাকায়, শেষ দেখাটাও হবে না। কিন্তু যে শহরে প্রথম আলাপ হয়েছিল তাঁদের, সেই শহরে বসেই এমন করে বন্ধুর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার তো কথা ছিল না।


মায়ানগরীতে বসে রাশিদ খান (Rashid Khan)-এর প্রয়াণের পাওয়ার পরে বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo)-র স্মৃতিতে ভেসে উঠছিল সেই বিমানবন্দরের আলাপ, চড়া রেওয়াজ, সন্ধের আড্ডা আর ঘি দেওয়া বিরিয়ানির কথা। মুঠোফোনের ওপারে বসে, এবিপি লাইভের (ABP Live) কাছে সেই সমস্ত স্মৃতি উজাড় করে দিলেন সঙ্গীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়।


৯ জানুয়ারি, দীর্ঘ চিকিৎসার পরে, কলকাতার বুকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাশিদ খান। দীর্ঘদিন ধরেই রাশিদ খানের (Rashid Khan) সঙ্গে বন্ধুত্ব বাবুলের। শিল্পীর কথা বলতে গিয়ে, আরেক শিল্পীর কথায় বারে বারেই ঘুরে ফিরে এল একটা শব্দ। ‘বন্ধুবৎসল’।


বাবুল সুপ্রিয় ও রাশিদ খানের বন্ধুত্বের বয়স নেহাৎ কম নয়। সেই স্মৃতি হাতড়ে, আবেগমাখা গলায় বাবুল বলছেন, ‘রাশিদ খান ছিলেন ভীষণ সরল, শিশুসুলভ একজন শিল্পী। অসম্ভব পছন্দ করতেন বন্ধুদের। ভালবাসতেন খেতে ও খাওয়াতে। কাজের সূত্রে এখন কলকাতায় অনেকটা সময় কাটে আমার। কলকাতা এলেই অন্তত একবার রাশিদ খানের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করতাম । সন্ধেবেলা চড়া রেওয়াজ করার ইচ্ছা হলেই রাশিদকে ফোন করতাম। উনি বলতেন.. ‘আরে আ যাও.. থোড়া লেট আনা, খানা খা-কে যানা’ (চলে এসো। একটু দেরি করেই এসো। রাতের খাবার খেয়ে যেও)।


খাদ্যরসিক ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী রাশিদ খান। তাঁর হাতের রান্নাও নাকি ছিল দুর্দান্ত। বাবুল সুপ্রিয় বলতেন, ‘দিনটা ছিল সম্ভবত ওঁর জন্মদিন। আমরা সব বন্ধুরা জড়ো হয়েছি ওর বাড়িতে। গান হবে। আড্ডা হবে। কিন্তু রাশিদ কোথায়? ও তখন বাড়ির রান্নাঘরে। জমিয়ে বানাচ্ছে ঘি দেওয়া বিরিয়ানি আর শামি কাবাব। রশিদ বলত, ‘সিঙ্গার হো তো কাহে কা ডায়েটিং! ঘি ওয়ালা বিরিয়ানি খাও’ ( সঙ্গীতশিল্পীর আবার মেপে খাওয়া কী! ঘি দেওয়া বিরিয়ানি খাও’)। সেবার আমরা সবাই, এমনকি ওর স্ত্রীও ভীষণ রাগারাগি করেছিল। কিন্তু ও ভীষণ সরল। এমনকি বেছে দিত বিরিয়ানির ভাল মাংসটাও। সেইদিনই আমরা একসঙ্গে বসে কত গান গাইলাম। কথার মধ্যে হঠাৎ গেয়ে ওঠা ছিল ওর স্বভাব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছিল সেদিনের সেই গানের ভিডিও।’


এহেন আলাপের শুরু হয়েছিল মুম্বই থেকে। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে বাবুল সুপ্রিয় বলছেন, ‘রশিদ খানের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় মুম্বইয়ের বিমানবন্দরে। বিমান থেকে নেমে, বাসে করে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম। সেই আলাপ। কথোপকথন। রশিদ খান যখন হাসপাতালে ভর্তি, আমি আর জয় (সরকার) খালি ভাবছিলাম দেখতে যাব। মুম্বইতে বসে এমন হঠাৎ করে ওঁর চলে যাওয়ার খবর পেলাম। শেষ দেখাটাও আর হল না। আমরা একসঙ্গে গান গেয়েছিলাম.. রবীন্দ্রসঙ্গীত।‘বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এল’। রশিদ খানের সঙ্গে আমার যে কত চড়া রেওয়াজ বাকি থেকে গেল।’


আরও পড়ুন: Rashid Khan Death: সোমা ও বাচ্চাদের সামনে কী করে দাঁড়াব জানি না, কান্নাভেজা গলায় বলছেন জিৎ


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।