কলকাতা: রাত পোহালেই নারী দিবস। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কেরিয়ার ও সংসার দুইই চালিয়ে এসেছেন সমানভাবে। তবে তাঁর যে চালিকাশক্তি, এই নারীদিবসে নেই তিনি। সদ্যই মাকে হারিয়েছেন তিনি। তবে জীবন তো থেমে থাকে না। সামনেই তাঁর ছবি মুক্তি। তার আগে নিজের জীবনের নারী থেকে শুরু করে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবি 'পুরাতন',  শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে কাজ এই সমস্ত বিষয় নিয়ে এবিপি লাইভ বাংলার সঙ্গে অকপটে কথা বললেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta)। 


ছোটবেলা থেকেই বড় হয়ে উঠেছেন একান্নবর্তী পরিবারে। ঋতুপর্ণা বলছেন, 'আমার মা, ঠাকুমা প্রত্যেকেই আমার অনুপ্রেরণা। আমার ঠাকুমা সেই যুগে একটা রেডিও তৈরি করেছিলেন। মাকে দেখেছি সংসার সামলেও নিজের পরিচিতি তৈরি করতে। সংসারের জন্য আত্মত্যাগ করতে। তখন মনে হত, মা হয়তো একটু বেশিই আত্মত্যাগ করে ফেলছেন। এতটাও করা ঠিক নয়। কিন্তু আমি ও তো মায়ের থেকে সেই শিক্ষাই পেয়েছি। আমিও এক হাতে সংসার সামলাই, অন্য হাতে কেরিয়ার। তবে এখন খুব মনে হয়, বকার মানুষটা নেই। মা চলে যাওয়ার পরে, আমার মাথার ওপর থেকে একটা ছাদ সরে গিয়েছে। তবে জীবন তো থেমে থাকে না। মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি কেরিয়ার আর সংসারকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।'


একা নারী হিসেবে যেমন সংসার সামলানোটা সোজা নয়, তেমন শর্মিলা ঠাকুরকে বাংলা ছবিতে দীর্ঘ এত বছর পরে ফিরিয়ে আনাটাও তো সোজা নয়। হেসে ফেলে ঋতুপর্ণা বললেন, 'হ্যাঁ, আমি তো এই ব্যাপারটায় নিজেকে ভীষণ লাকি বলেই মনে করি। শর্মিলা ঠাকুর আমায় নিজেই বলেছিলেন, কোনও বাংলা ভাল চিত্রনাট্য পেলে উনি কাজ করতে চান। কাজটা উনি আমার সঙ্গেই করতে চেয়েছিলেন। তখনই এই চিত্রনাট্যটা লেখা। তবে আমার একটা আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি শর্মিলা ঠাকুরকে রাজি করাতে পারব। নববর্ষে এই ছবিটা শুধু আমার প্রাপ্তি নয়, দর্শকদেরও আমার তরফ থেকে একটা বড় উপহার। ওঁর সঙ্গে কাজ করে বুঝেছি, ওঁর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তার মধ্য়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ওঁর প্রাসঙ্গিক থাকা। উনি হামেশাই আমায় জিজ্ঞাসা করতেন, আমি কী বই পড়লাম, কী সিনেমা দেখলাম... সমস্ত বিষয়ে ওঁর জ্ঞান রয়েছে। উনি যেভাবে একজন প্রিন্সকে বিয়ে করেছেন, ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার করেছেন, আবার সমান দাপটের সঙ্গে কেরিয়ারটা চালিয়ে গিয়েছেন, তা সত্যিই শেখার। এমন নারীই তো অনুপ্রেরণা হতে পারে। আমার আরও একজন অনুপ্রেরণা হেমা মালিনীজী। উনি একদিকে রাজনৈতিক কেরিয়ার সামলাচ্ছেন, অন্যদিকে নাচ করছেন এখনও, আবার অভিনয়... আমি হয়তো এদের সামান্যই অনুসরণ করতে পেরেছি।'


সংসার সন্তান হয়ে যাওয়ার পরে কেরিয়ার.. ঋতুপর্ণার কাছে কোন অধ্যায়টা সবচেয়ে কঠিন ছিল? অভিনেত্রী বলছেন, 'মা হয়ে যাওয়ার পরে অভিনয় আর নাচ বজায় রাখাটা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। তবে আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। সিঙ্গাপুরে আমার সংসার। আমি কলকাতায় বসে ঠিক করি ওখানে কী রান্না হবে, মেয়ে নাচের সময়ে কোন পোশাকটা পরবে, বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যাবে কি না... সব। আমায় আসলে মাল্টিটাস্কিং করতে হয়। সেটা করতে করতেই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এখন হয়তো শ্যুটিংয়ের মধ্যে, শট দিতে গিতেই মেয়েকে বলে দিই কোথায় কোন জিনিসটা আছে বা কী খেয়ে বাইরে বেরবে ও। একদিকে শ্যুটিং করছি, একদিকে বাড়িতে কী রান্না হবে সেটা ঠিক করছি। অফিস সামলাচ্ছি.. এটা আমার এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।'


অনেকেই মনে করেন, ঋতুপর্ণার কেরিয়ার কুসুমাস্তীর্ণ। সত্যিই কি তাই? অভিনেত্রী বলছেন, 'একেবারেই নয়। আমার সামনে বাধা আসবেই, সেটা আমি মেনে নিয়েছি। কিন্তু বাধা আমায় বাঁধতে পারবে না। আমি একজন স্বাধীন নৃত্যশিল্পী, স্বাধীন অভিনেত্রী, স্বাধীন প্রযোজক। কোনও বড় হাউজের ওপর ভরসা করে থাকি না আমি। স্বাধীনভাবে কাজ করি, সবার সঙ্গেই সদ্ভাব বজায় রাখি বলে অনেকের সমস্যা হয়। কিন্তু আমি তো তাতে দমবার পাত্রী নই। জীবনকে ইতিবাচকভাবে দেখতেই আমি ভালবাসি।'


আরও পড়ুন: Mamata Shankar: নিজের আত্মসম্মান আর মর্যাদা বজায় রাখলে, কেউ খারাপ প্রস্তাব দিতে পারে না