কলকাতা: কাজের তাগিদে গ্রাম থেকে শহরে আসা, স্বপ্ন দেখা আর তারপর হঠাৎ সেই স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া। জীবিকার উৎস বন্ধ, অনিশ্চিত রোজগার আর তারপর জীবিকা বদলে ফেলা। এই প্রেক্ষাপটের গল্পই বলে, 'আকাশ অংশত মেঘলা'। ছবির মুখ্য চরিত্র রুদ্রনীল ঘোষের (Rudranil Ghosh) ভাষায়, 'আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘরের সেই দেওয়ালটার ছবি দিই না , যেখানকার প্লাস্টার উঠে যায়। কতটা ভালো আছি সেটা দেখানোর জন্য ঘরের সবচেয়ে সুন্দর অংশের ছবিটা দিই। অথচ আমাদের সত্যিটা লুকিয়ে ওই প্লাস্টার খসা দেওয়ালেই।'
সামনেই মুক্তি পাচ্ছে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'আকাশ অংশত মেঘলা'। ছবিতে রুদ্রনীলের চরিত্রের নাম রসময়। তাঁর চরিত্র এমন একজন শ্রমিকের, যিনি কারখানা লকআউটের ফলে চাকরি হারান। নিজের বাড়ি বানানোর স্বপ্ন, মেয়ের চিকিৎসা, আর আরও একটু ভালোভাবে থাকার চেষ্টা সবটাই চুরমার হয়ে যায়। বাধ্য হয়েই জীবিকা বদল করতে হয় তাঁকে। এবিপি লাইভকে রুদ্রনীল বলছেন, 'এই ছবির মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ বছরের একটা প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরা হয়েছে। তৎকালীন সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য সেইসময় একের পর এক কারখানা লকআউট হয়ে যায়। বাড়তে থাকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। চাকরি হারিয়ে বসেন বহু কারখানার শ্রমিক। এই ছবি নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের লড়াইকে তুলে ধরেছে যেটা খুব প্রাসঙ্গিক। স্রোতে গা ভাসিয়ে পরিবারকে বাঁচাব না কি নিজের আদর্শকে নিয়ে বাঁচব সেই লড়াই চলে রসময় আর অনির্বাণের মধ্যে। অনির্বাণের চরিত্রে অভিনয় করছেন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আমরা কোনও দলকে তুলে ধরিনি, কেবল পরিস্থিতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।'
আরও পড়ুন: Tarun Majumdar: তরুণ মজুমদারের ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিচালকের পারলৌকিক কাজ করলেন দেবশ্রী
এই ছবি কি তবে রাজনৈতিক ছবি? রুদ্রনীল বলছেন, 'রাজনৈতিক ছবি তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস বা সিপিএমের পতাকার তলায় তৈরি হয় না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য সমাজের যে পরিস্থিতি হয়, সেই পরিস্থিতিকেই তুলে ধরে ছবি। বাংলা ছবি চিরকালই সত্যি কথা বলে আর তাই সমাদৃতও হয়। যে মাঝবয়সী লোকটা সিকিওরিটি গার্ডের চাকুরি করে, তার আসল জীবিকা কী ছিল আমরা জানি না। যে ছেলেরা আজ স্যুইগিতে আজ ডেলিভারি করেন, বা টোটো চালান, তাঁরা হয়তো যথেষ্ট শিক্ষিত।'
একজন কারখানার কাজ হারানো শ্রমিকের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছিলেন রুদ্রনীল? অভিনেতা বলছেন, 'আমাদের যেখানে ট্রেলার লঞ্চ হল, সাউথ সিটি মলে, সেখানে আগে একটা কারখানা ছিল। আমরা জানি না সেই শ্রমিকেরা কোথায় গিয়েছেন। আমার বহু চেনা মানুষ লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন। অভিনেতাদের কাজই হল পরিস্থিতিকে লক্ষ্য করে সেটা অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা।'