কলকাতা: ২০১১ সাল। ছোটপর্দায় হাজির হল নতুন ধরনের এক ধারাবাহিক। একটি কলেজ, এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী, বন্ধুবান্ধব, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল। কীসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা? নাচ! আর সেই থেকেই প্রেম-ভালবাসা-বন্ধুত্বের সম্পর্কের ভাঙাগড়া আর ফিরে দেখা কলেজ জীবন। যেখানে প্রত্যেক আবেগের বহিঃপ্রকাশ হত নাচের মাধ্যমে। ঠিকই ধরেছেন, ধারাবাহিকের নাম 'দিল দোস্তি ডান্স' (Dil Dosti Dance) ওরফে 'ডি থ্রি' (D3)। যুবসমাজ বুঁদ হয়েছিল সে ধারাবাহিকে। আর তারই অন্যতম মুখ্য চরিত্র স্বয়ম শেখাওয়াত, অভিনয়ে শান্তনু মাহেশ্বরী (Shantanu Maheshwari)। কলকাতার দর্শকের আকর্ষণের অন্যতম মানুষ। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই অভিনেতার উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি পাড়ায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আপাতত তিনি ছোটপর্দা, ওয়েব প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে ছাপ ফেলেছেন বড়পর্দায়। এই মুহূর্তে শ্যুটিং সারছেন পরিচালক প্রতিম ডি. গুপ্তার 'চালচিত্র' (Chaalchitra) ছবির। তারই ফাঁকে ফোনে সময় দিলেন এবিপি লাইভকে। আড্ডা দিলেন দুর্গা পুজো নিয়ে। 


বাঙালি নন, তবে বেড়ে ওঠা একেবারে খাস কুমোরটুলিতেই


দুর্গাপুজো বললেই কী মনে পড়ে শান্তনুর? অভিনেতার কথায়, 'আমি থাকতাম কুমোরটুলিতে, যেখানে ঠাকুর তৈরি হয়। আমার কাছে দুর্গাপুজো মানেই ওই ঠাকুর তোলার সময় সেই হইহট্টোগোল, আওয়াজ, চেঁচামেচি। ওইটা শুনলেই বুঝতে পারতাম যে এই তো দুর্গাপুজো এসে যাচ্ছে। অন্যরকম একটা আনন্দ হত।' কলকাতার ছেলে হয়ে 'প্যান্ডাল হপিং' করবেন না তা হয়? শান্তনু বলে চলেন, 'আর দুর্গাপুজো মানে তো প্যান্ডাল হপিং হবেই। আর সেই সঙ্গে ডান্ডিয়া, যদিও সেটা একেবারে অবাঙালি প্রথা। আর রাতে আমাদের গাড়ি ভাড়া করা হত, উত্তর কলকাতা থেকে দক্ষিণ কলকাতা গিয়ে ঠাকুর দেখা হত।' আর পাঁচটা কলকাতাবাসীর মতো তিনি মুম্বই শিফট করে কলকাতার পুজো খুবই মিস করেন, 'আমি জানি না কীভাবে সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায়। কিন্তু পুজোর সময় মুম্বইয়ে থাকা আর কলকাতার পুজোর মেজাজ না দেখতে পাওয়া, ভীষণ মিস করি তখন।' 


তবে এই বছর খানিকটা আলাদা কাটছে শান্তনুর। আপাতত শহর কলকাতা সেজে উঠছে দুর্গাপুজোর জন্য। চারিদিকে তুঙ্গে পুজোর প্রস্তুতি। এই সময় অভিনেতাও রয়েছেন কলকাতাতেই। যদিও চলছে শ্যুটিং। কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করায় শান্তনুর জবাব, 'দুর্দান্ত! বাঁশের পুরো কাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে দেখতে পাচ্ছি রাস্তা আটকানোর জন্য। সেটা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। মানে সেই স্কুলে পড়ার সময় এই প্রস্তুতিগুলো দেখলেই মনে হত যে ব্যাস! এবার ছুটি আসতে চলেছে একটা লম্বা। বিশেষ করে মহম্মদ আলি পার্কের যে পুজোটা, ওখানে তো বিশেষ ব্যারিকেড লাগিয়ে দেওয়া হয়। যত সেগুলোর পরিমাণ বাড়ত, ততই আনন্দ হত যে এবার স্কুলে ছুটি পড়বে। আসলে ছোট ছোট উত্তেজনা এগুলো, শুনলে হয়তো বোকা বোকা লাগতে পারে, কিন্তু বড় হয়ে গেলে, বা শহর ছেড়ে গেলে, এগুলোই ভীষণ মিস করে সকলে, আমিও করি। মানে তখনই বোঝা যায় এই অনুভূতিগুলোকেই 'টেকেন ফর গ্রান্টেড' করে নিয়েছিলাম।' কলকাতার বন্ধুবান্ধব এখনও আছে শান্তনুর, কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগই এখন বিদেশের বাসিন্দা। 


আরও পড়ুন: Angana Roy on Durga Puja: ভোগের খিচুড়ি আর ফুচকা, নিয়ম ভাঙার দুর্গাপুজোয় অঙ্গনার স্টাইল স্টেটমেন্ট শুধুই শাড়ি


আপাতত কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে চলছে 'চালচিত্র'র শ্যুটিং। আর পরিচালক যে তাঁর নিরামিশাষী অভিনেতার খাওয়া-দাওয়া প্রায়ই চিন্তায় পড়েন তাও জানা গেল শান্তনুর কথায়। আপাতত বেশ ঘুরে ঘুরে শ্যুটিং হচ্ছে বলে 'স্ট্রিট ফুড'-এর মধ্যে ফুচকা আর ঝালমুড়িই খেয়েছেন বেশি। তবে শান্তনুর আফসোস, 'যেখানে যেখানে শ্যুটিং করলাম এখনও ভাল ঝালমুড়ি ঠিকঠাক পেলাম না।' হাসতে হাসতে বললেন, 'এটায় একটু হতাশই হয়েছি। এখনও ওটা ভাল খুঁজে বের করা বাকি আছে। তাছাড়া তো এমনি লুচি-পুরি খাচ্ছি।' তবে কলকাতায় থাকলেও শ্যুটিংয়ের কঠিন শিডিউলের জন্য কুমোরটুলি গিয়ে ওঠা হয়নি এখনও তাঁর। শ্যুটিং সেরে পুজোর আগে ফিরে যাবেন মুম্বই, তবে আবার পুজোয় কলকাতায় ফেরার চেষ্টাও করবেন অভিনেতা, জানালেন নিজেই। 'আমার বন্ধুরা এখানের পুজো দেখতে চায় ভীষণ', তাই হয়তো কলকাতাতে আসতেও পারেন অভিনেতা পুজোয়।