নয়াদিল্লি: সুশান্ত সিংহ রাজপুত মৃত্যু মামলায় এখনও পর্যন্ত খুনের কোনও প্রমাণ মেলেনি। সেজন্য সিবিআইয়ের তদন্তের দিশা অন্য দিকে ঘুরে গিয়েছে। সেইসঙ্গ সিবিআই রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দায়ের মামলায় অভিযুক্তদের ফের জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্রের খবর,  এখনও পর্যন্ত এমন ছয়টি তথ্য মিলেছে, যাতে সিবিআই সুশান্তের মৃত্যুতে আত্মহত্যা তত্ত্বই মানছে। যদিও এ ব্যাপারে সরকারিভাবে এখনও সিলমোহর পড়েনি। তদন্তে এখনও পর্যন্ত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র হাতও খালি। এই অবস্থায় তদন্তকারী সংস্থাগুলি মনে করছে, এনসিবি-র পক্ষ থেকে রিয়ার গ্রেফতারির সঙ্গে সুশান্তর মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নেই।
শুরুতে সিবিআই সুশান্তর মৃত্যু খুন, না আত্মহত্যা, সে ব্যাপারে তদন্ত করছিল। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে সিবিআই ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক পরীক্ষাও করে এবং সুশান্তর মৃত্যুর ঘটনার পুণর্নিমানও করে। একইসঙ্গে সিবিআই এই মামলায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সহ সুশান্তর আশেপাশের ভাড়াটেদেরও কয়েকদিন পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
সিবিআই সূত্র অনুসারে, তদন্তে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য উঠে আসেনি, যাতে প্রমাণ হয় যে, সুশান্তকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু একটা বিষয় সামনে এসেছে যে, প্রয়াত অভিনেতা পরিবার ও রিয়া-এই দুই পক্ষের টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত যে সব বয়ান পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি অনুসারে, পরিবার রিয়াকে পছন্দ করত না এবং এরপরও রিয়া সুশান্তর সঙ্গে ছিলেন। এজন্য, পারিবারিক কলহের কারণে সুশান্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন কিনা, এই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যতগুলি হোয়াটস্যাপ চ্যাট সামনে এসেছে, তার থেকে জানা যাচ্ছে যে, পরিবার ও রিয়াকে নিয়ে সুশান্ত চাপের মুখে পড়ে থাকতে পারেন। কারণ, দুই পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যেই ঝগড়া হয়েছে এবং দুই পক্ষই নিজেদের সঠিক প্রমাণ করতে সুশান্তর ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করে থাকতে পারে।
সূত্রের খবর, সিবিআই আধিকারিকরা তদন্ত চালিয়ে এমন ছয়টি তথ্য পেয়েছেন, যার থেকে সুশান্তর মৃত্যু আত্মহত্যাই বলে মনে হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, এই ছয়টি তথ্য হল-
১- সুশান্তর গলায় দড়ি দিয়ে সামনের থেকে পিছনে টানা হয়নি
২-সুশান্ত ঘাড় ও চোখে রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে দেখা যায়নি
৩. ঝুলে থাকার কারণে সুশান্তর শরীরের রক্ত নিচে এসেছিল
৪. সুশান্তর হেমারেজ হয়নি
৫. সুশান্ত গলা বা মাথায় লাঠি বা অন্য কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়নি
৬-ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সকদের প্যানেল এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলেই উল্লেখ করেছেন
আইনি বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন, এমন মামলার তদন্তে তদন্তকারী সংস্থাগুলি বেশ সমস্যার সামনে পড়তে হয়। সিবিআই সূত্র অনুসারে, এই মামলায় এফআইআর দায়েরের পরই তদন্তকারী সংস্থার তাদের অনুসন্ধানের ব্লপ্রিন্ট তৈরি করে নিয়েছিল এবং এর প্রথমেই ছিল হত্যা, না আত্মহত্যা-তা খতিয়ে দেখা।
সূত্রের খবর, এই ব্লুপ্রিন্টে থাকা অন্যান্য দিকগুলিরও তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের যে ব্লপ্রিন্ট তৈরি হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল, এটা হত্যা, না আত্মহত্যা। যদি হত্যা হয়-তাহলে এতে লাভ কার এবং কে খুন করেছে বা করিয়েছে। যদি আত্মহত্যা হয়, তাহলে রিয়া কি দায়ী। সুশান্তর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টারাপয়সা হাতানো হয়েছিল কিনা। রিয়া বা পরিবার সুশান্তর অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা সরিয়েছিল।
সূত্রের খবর, সিবিআই এই মামলায় রিয়ার দায়ের করা এফআইআরের ভিত্তিতে তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কারণ, এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ স্পষ্ট জানানো হয়েছিল যে, এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে যতগুলি মামলা দায়ের হবে, সেগুলির তদন্তও সিবিআই করবে। সূত্র অনুসারে, পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে সিবিআইয়ের পরিবারের লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই। শুধুমাত্র সাক্ষী হিসেবে নয়, অভিযুক্ত হিসেবেও সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দিতে হবে তাঁদের এবং এরই ভিত্তিতে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, ধারা ৩০৬ অনুসারে তদন্তের পরিধি বাড়ানো যায় এবং পরিবারও এর আওতায় আসতে পারে। সুশান্তর মৃত্যু মামলায় ইডি-র হাতে এমন কোনও তথ্য এখনও আসেনি যে, যার থেকে প্রমাণ হয়, সুশান্তর অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা রিয়া বা পরিবারের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে ও আর্থিক তছরুপ হয়েছে। মাদক মামলায় এনসিবি রিয়াকে গ্রেফতার করেছে। যদিও তদন্তকারী সংস্থাগুলি মনে করছে, এরসঙ্গে সুশান্তর মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নেই। যদিও তদন্তের ব্যাপারে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু সূত্রে দাবি, মুম্বইয়ে তদন্তকারী দল দিল্লি ফেরার পর এ ব্যাপারে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে পারে সিবিআই।