দেখে নেব সেই পাঁচ প্রতিবাদী মহিলাকে যাঁদের লড়াইয়ে দেশ থেকে উঠে গেল তিন তালাক প্রথা
আতিয়া সাবরির বিয়ে হয় ২০১২ সালে। এই বছর জানুয়ারিতে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন, কারণ, তাঁকেও একটি চিরকুটেই তালাক দেওয়া হয়। তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে। একজনের বয়স চার এবং আর একজনের বয়স তিন। তাঁদের বড় করার জন্যেই টাকা প্রয়োজন সাবরির। তাই তিনি মনে করেন, এই বিচ্ছেদপ্রথা আইনবিরুদ্ধ। আজকে দেশের শীর্ষ আদালতের রায়, তাঁদের এই দীর্ঘ লড়াইকেই স্বীকৃতি দিল। অবশেষে তাঁরা বিচার পেলেন।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appআফরিন রহমান, ২০১৪ সালে বিয়ে। বিয়ের দু-তিন মাস পরেই শুরু অত্যাচার। সেপ্টেম্বরে আচমকা তাঁকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেন আফরিনের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। বাপের বাড়ি চলে আসার পর স্পিড পোস্টে চিঠি মারফত্ তাঁকে তালাক দেওয়া হয়।
গুলশন পরভিন, উত্তরপ্রদেশের রামপুরের মহিলা। ২০১৫ সালে তাঁর স্বামী তাঁকে দশ টাকার একটি স্ট্যাম্প পেপারে তালাকনামা লিখে পাঠিয়ে দেন।জানা গিয়েছে, শ্বশুরবাড়িতে থাকাকালে তাঁর ওপর চলেছে শারীরিক নির্যাতনও। গুলশনের কথায়, একদিন সকালে তাঁর স্বামীর মনে হয়েছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি ও তাঁর সন্তান ঘরছাড়া হয়ে গেছেন।
ইসরত জাহান, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার এই মহিলাকে তাঁর স্বামী তিন তালাক দেন ফোনে। ইসরতের কথায় এপ্রিল ২০১৫-এ তাঁর স্বামী দুবাই থেকে ফোন করে তাঁকে শুধু বলেন তালাক, তালাক, তালাক। তারপর ফোন কেটে দেন। এরপর সেই ব্যক্তি আর একজনকে বিয়ে করেন, এবং ইসরতের চার সন্তানকেও তাঁর থেকে নিয়ে চলে যান। এখন ইসরতের দাবি, তাঁর সন্তানদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক, এছাড়া খোরপোশও দেওয়া হোক।
আজ থেকে দুবছর আগে উত্তরাখণ্ডের মহিলা সায়রা বানু আদালতের দ্বারস্থ হন। কারণ, তাঁর স্বামী বিয়ের পনেরো বছর পর আচমকা একটি চিঠিতে তিন তালাক লিখে তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনার পরই সায়রা বানু আদালতের দ্বারস্থ হন। সেখানেই তিনি এই প্রথার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি তাঁর মামলায় আবেদন জানান, তালাক-এ-বিদাত, বহু বিবাহ এবং নিকাহ হালালাকে এখনই আইনবিরুদ্ধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করুক আদালত। এরপরই সায়রা বানুর স্বামী তাঁর সমস্ত আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেন, এই তিনটি আইনই মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড দ্বারা স্বীকৃত। এমনকি সায়রা বানুর স্বামী রিজওয়ান মহিলার কাছ থেকে তাঁর দুই সন্তানকে কেড়ে নিয়েছেন। তাঁকে ছ ছবার গর্ভপাত পর্যন্ত করতে হয়েছে। সায়রা বানুর আবেদনের ভিত্তিতেই নরেন্দ্র মোদী সরকার শীর্ষ আদালতে এফিডেভিট ফাইল করেন।
সুপ্রিম কোর্টের এক ঐতিহাসিক রায় দেশ থেকে উঠে গেল তিন তালাক প্রথা। এই প্রথায় মুসলিম ধর্মের পুরুষরা তিন তালাক বলে স্ত্রীর থেকে তত্ক্ষনাত্ বিচ্ছেদ পেয়ে যেতেন। এই প্রথা অসাংবিধানিক। আজ সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ বিচারপতি বিশিষ্ট বেঞ্চে তিন বিচারপতিই এই প্রথাকে শুধুমাত্র অসাংবিধানিক নয়, ইসলাম শিক্ষার পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেন।
তবে যে পাঁচ মহিলার দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে আজ এই ঐতিহাসিক রায় দিল শীর্ষ আদালত, তাঁদের কথা জেনে নেব একনজরে
বহু মুসলিম মহিলাকে এই প্রথা ব্যবহার করে ইমেলে, হোয়াটসঅ্যাপে, ফোনে, চিঠি মারফত তালাক দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে গিয়ে বহু মুসলিম মহিলাই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁদের দাবি ছিল এটা বেআইনি। তাই বিচার পেতে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। আজকের পাঁচ বিচারপতি বিশিষ্ট বেঞ্চে যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন প্রধান বিচারপতি জে.এস খেহর, বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, রোহিনটন ফলি নরিমান, উদয় উমেশ ললিত এবং আব্দুল নাজির। এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল মে মাসে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -