ভারতে এল ‘অ্যাপাচে গার্ডিয়ান’ চপার, কেন একে সমীহ করে বিশ্ব, কী এর বিশেষত্ব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি হল বিশ্বের অন্যতম সর্বাধুনিক মাল্টি-রোল কমব্যাট হেলিকপ্টার। মার্কিন সামরিক বাহিনী এই কপ্টারই ব্যবহার করে। ভারতীয় বায়ুসেনা যে মডেলের কপ্টার কিনেছে, সেটাই সর্বাধুনিক। এই মডেল চালকবিহীন বিমানকেও ধ্বংস করতে সক্ষম। ভারতীয় বায়ুসেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি পাক সীমান্ত লাগোয়া পঞ্জাবের পাঠানকোট ও অন্যটি চিন সীমান্ত লাগোয়া অসমের জোরহাটে দুটি স্কোয়াড্রনে ভাগ করে অ্যাপাচেগুলি রাখা হবে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appদিন হোক বা রাত, পার্বত্য হোক বা মরু-অঞ্চল, গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা-- যে কোনও আবহাওয়া, যে কোনও পরিবেশে কাজ করতে সক্ষম অ্যাপাচে। এই চপার কিছুতেই পিছিয়ে আসে না। সর্বোপরি, এই কপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণও অত্যন্ত সহজ বলেও দাবি নির্মাতাদের। তাদের মতে, ‘অন-ফিল্ড মেনটেন্যান্স’-- অর্থাৎ রণাঙ্গণেই এই কপ্টারের মেরামত করা সম্ভব।
আরও শক্তিশালী হল ভারতীয় বায়ুসেনা। বিমান বাহিনীতে সামিল হল মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি ৮টি অত্যাধুনিক অ্যাপাচে হেলিকপ্টার। আজ পঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বায়ুসেনার হাতে হেলিপ্টারগুলিকে সরকারিভাবে হস্তান্তর করেন বোয়িং ইন্ডিয়ার শীর্ষকর্তা। উপস্থিত ছিলেন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিএস ধানোয়া।
আরও একটি বিশেষত্ব রয়েছে অ্যাপাচের, যা একে অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় আলাদা সমীহ এনে দিয়েছে। তা হল, অত্যন্ত উচ্চতায় ওড়ার ক্ষমতা। জানা গিয়েছে, সমুদ্রতল থেকে প্রায় ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় এই কপ্টার অত্যন্ত সাবলীল কাজ করতে পারে। এই কপ্টারের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে এর রেডার ও ইনফ্রা-রেড সিগনেচার (বিকিরণ) ন্যূনতম হয়ে যায়। ফলত, শত্রু-রেডারে তা ধরা পড়ে না।
কারণ, এই হেলিক্টারের লাগানো মিসাইল ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে শত্রুসেনার লুকনো বাঙ্কার ও সমর-ভাণ্ডার ধ্বংস করতে সক্ষম ও বিশেষত্ব রয়েছে অ্যাপাচের। এক-একটি উড়ানে মোট ১৬টি মিসাইল নিজের ডানার নীচে বহন করার ক্ষমতা রয়েছে অ্যাপাচের। এর পাশাপাশি, একইসঙ্গে ৭৬টি রকেট ও ১২০০ রাউন্ড গুলি বহনে সক্ষম এই কপ্টার। ফলত, যুদ্ধে গেলে একেবারে তৈরি হয়েই যেতে পারে এই অত্যাধুনিক চপার।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, সুসজ্জিত অ্যাপাচে হেলিকপ্টার বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্তির পর আকাশপথে শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালানো আরও সহজ হবে। ভারতীয় বায়ুসেনার একটি দল ইতিমধ্যেই আমেরিকায় গিয়ে প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছে। সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার আবহে অ্যাপাচের আগমন ভারতীয় বায়ুসেনার মনোবল এক ধাক্কায় আরও অনেকটাই বাড়িয়ে দিল বলে মত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই কপ্টারে ব্যবহৃত মিসাইল-- বিশেষ করে হেলফায়ার মিসাইল এক-একটি ছোটখাটো বিমান। কারণ, এই মিসাইলে নিজস্ব গাইডেন্স সিস্টেম কম্পিউটার রয়েছে। নিজস্ব স্টিয়ারিং কন্ট্রোল এবং প্রোপালসান সিস্টেমও রয়েছে প্রত্যেক মিসাইলে। আর্মার্ড ট্যাঙ্ক ও বাঙ্কার-বিধ্বংস করতে এই মিসাইলের জুড়ি মেলা ভার।
এই চপারে রয়েছে-- ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ‘হেলফায়ার’ মিসাইল। আকাশ থেকে আকাশ ‘স্টিঙ্গার’ ক্ষেপণাস্ত্র। আকাশ থেকে ভূমি ৭০ এমএম ‘হাইড্রা’ রকেট ও সামনে শক্তিশালী ও দ্রুতগতির ‘এম২৩০’ ৩০ এমএম অটোমেটিক ক্যানন। এছাড়া, যুদ্ধবিমানের মতো এটি শত্রু এসাকার রেডার ছবি তা ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেম সহ বিভিন্ন বেস স্টেশনে পাঠাতে সক্ষম। নিজস্ব নাইট ভিসন ও নাইট টার্গেটিং সিস্টেমর দৌলতে শত্রুর কোনও সমরাস্ত্রই এর নজর এড়াতে পারবে না।
কিন্তু, কেন অ্যাপাচে হেলিকপ্টারকে বাছল ভারতীয় বায়ুসেনা?কী এর বিশেষত্ব? দেখে নেওয়া যাক। প্রতিরক্ষা গবেষকদের মতে, অ্যাপাচে -- যার পোশাকী নাম ‘এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচে গার্ডিয়ান অ্যাটাক হেলিকপ্টার’-- তৈরি করেছে মার্কিন সংস্থা বোয়িং। এটি স্রেফ যুদ্ধ কপ্টারের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপাচে একটা আস্ত সিস্টেম।
২০১৫-য় মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থার সঙ্গে ২২টি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। এখনও পর্যন্ত মার্কিন সংস্থার কাছ থেকে ৮টি হেলিকপ্টার হাতে পেয়েছে বায়ুসেনা। ২০২০-র মধ্যে বাকিগুলি এসে পৌঁছবে। ভারত বিশ্বে ১৬তম দেশ, যাদের বিমান বাহিনীর হাতে থাকছে অত্যাধুনিক অ্যাপাচে হেলিকপ্টার।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -