World Mental Health Day: সংসার আর অফিসে ১০০য় ১০০পেতেই হবে! নিজেই বেঁধেছেন টার্গেট, কোন মানসিক-বিপদে আপনি?
World Mental Health Day - পেশাগত দায়িত্ব ও পারিবারিক দায়িত্ব, ফাঁকি দেওয়ার জো নেই এতটুকুও। কারণ মাথায় ঘোরে সেই অদৃশ্য মার্কশিট। বাধ্যবাধকতা এবং ব্যক্তিগত প্রত্যাশা, একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে আজকের মেয়েরা এক নতুন মানসিক যুদ্ধে।

রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী, কর্মে দশভূজা। যুগ যুগ ধরে মেয়েদের প্রশংসায় ব্যবার হয়েছে এই সব কথা। কিন্তু এসব কিছুর মাঝে কি হারিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের ভাল-থাকার বিষয়টি ? আজ, ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এই প্রশ্ন। ঘর সামলানো মহিলাদের একরকম চ্যালেঞ্জ আর কর্মজীবী মহিলাদের চ্যালেঞ্জ আরেক রকমের। পেশাগত দায়িত্ব তো সামলাতে হয়ই , সেই সঙ্গে পারিবারিক দায়িত্ব, ফাঁকি দেওয়ার জো নেই এতটুকুও। কারণ মাথায় ঘোরে সেই অদৃশ্য মার্কশিট। বাধ্যবাধকতা এবং ব্যক্তিগত প্রত্যাশা, একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে আজকের মেয়েরা এক নতুন মানসিক যুদ্ধে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিখুঁতভাবে কাজ করার জন্য ক্রমাগত চাপ এক সময়ে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এবিপি লাইভের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করলেন, মনোবিদ ড. দেবশিলা বোস ( Counselling Psychologist, Fortis Hospital, Anandapur)
মনোবিদের মতে, এই চাপটা সব থেকে বেশি পড়ে মধ্যবয়সী মহিলাদের উপর । কারণ, এই সময়ে একদিকে তাঁর নিজের সন্তান বড় হচ্ছে, তার স্বাধীন মতপ্রকাশ পাচ্ছে। সন্তান একটু বড় হয়ে যায় এসময়। অর্থাৎ একেবারে হাতের তালুতে তুলোয় মুড়িয়ে যত্ন করে রাখার সময়টা পেরিয়ে যায়। তাই মায়ের মনে হতে পারে, কী যেন একটা খালি-খালি! সেই ট্রানজিশনের সময়ে যে সিনড্রোমটি মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়, তা হল - “empty nest syndrome”। এর কোনও অসুখ নয়, একটা মানসিক পরিবর্তন। যে মায়ের জীবনটাই ছিল সন্তানের যত্ন নেওয়াকে কেন্দ্র করে। তার অস্তিত্বই ছিল সন্তানকে ঘিরে। এই সময়ে তাঁকে বুঝতে হয়, তা পরিচয় শুধু সন্তানের যত্ন নেওয়া নয়। ভারতে অনেক মায়েদেরই এই সমস্যা হয়, কারণ তাঁরা এর আগের কিছু বছর হয়ত শুধু সন্তানকে নিয়েই কাটিয়েছেন। এই সময়টা নিজের যত্ন নেওয়া, শখপূরণ করার, সামাজিক মেলামেশা বাড়ানো ও পরিবারের থেকে খানিকটা সহায়তা পেলেই অনেকটা ভালভাবে এই সমস্যাটা অতিক্রম করা যায়।
যেসব মহিলারা সন্তান পালনের সঙ্গে সঙ্গে বাইরের কাজও করেন, তাঁদের আবার ধাক্কাটা দুই তরফে। কেরিয়ার ও সংসার, উভয় ক্ষেত্রেই ১০০ দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে, হতাশায় ভোগেন অনেকে। মনে রাখতে হবে, ওয়ার্ক - লাইফ ব্যালেন্স করাই আপনার লক্ষ্য! কেউ নিখুঁত নয়। বরং নিজেকে ভাল রাখতে, সুস্থ রাখতে কাজ ভাগ করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। নিজেকে ভাল রাখার পথে একটা পদক্ষেপ। সহকর্মী, নিজের পার্টনার বা পরিবারের সদস্যদের সাথে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিলে ক্রেডিট কমে যায় না! বরং নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
মধ্য বয়সী যাঁরা এই দুইয়ের মাঝে আটকা পড়ে হাসফাঁস করছেন, তাঁরা একটু সময় দিন নিজেকে। মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে দৈনন্দিন রুটিনে নিজের কথা মাথায় রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। অন্তত সামান্য হাঁটাহাঁটি, হালকা স্ট্রেচিং মনের চাপ কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ক্যালোরি ব্যালেন্সও করে।
ভাল থাকতে গেলে বেশি নয়, ব্যালেন্সড ডায়েটে নজর দিতে হবে।সেই সঙ্গে ঘুমের দিকেও নজর দিন। কঠিন মনে হবে প্রথম প্রথম, কিন্তু সাধ্যাতীত নয়। রুটিন বদলান একটু একটু করে। খাবার না খাওয়া বা কাজ শেষ করার জন্য দেরি করে জেগে থাকা উদ্বেগ এবং ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে তোলে।
নিজের বিশ্রামের কথা নিজেকেই ভাবতে হবে। নিজের শখকে গুরুত্ব দিন। আরও একটা বিষয়, মহিলাদের প্রায়শই কারও কথা ফেলতে পারেন না। পরিবার, পরিজন, অফিস, সব জায়গায় অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেন। সঠিক সময় না-বলতে না-পারাচাও খারাপ অভ্যেস। প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিন। কাজের পরে ইমেল বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত করতে পারলে ভাল।
আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলারা অনেক সময়ই আবেগ প্রকাশ করতে লজ্জা বোধ করেন। হতাশা, দুঃখ বা অসহায়তা, চেপে রাখলে, মানসিক চাপকে তীব্র করে তোলে। বিশ্বস্ত বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন বা মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সঙ্গে আলোচনা করুন।
নিজের যত্নকে ভোগ-বিলাস হিসেবে নয় বরং অপরিহার্য হিসেবে দেখা উচিত। নিজের শখকে গুরুত্ব দিন। নিজের মতো একা সময় কাটান। বন্ধুদের সঙ্গে করুন। যক্তিগত আনন্দের জন্য কিছু না কিছু করুন। কর্মজীবী মহিলারা বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্র উভয় ক্ষেত্রেই অপরিসীম অবদান রাখেন। কিন্তু দেখবেন তা যেন কোনওভাবে আপনার মানসিক শান্তি না কেড়ে নিতে পারে!























