মুম্বই: বিধু বিনোদ চোপড়া (Bidhu Binod Chopra)-র পরিচালিত, সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি '12th Fail'-এর 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' বিক্রান্ত মেসি (Vikrant Masshi)-ই। ছবি মুক্তি পাওয়ার পরে, এই কথা বলেছিলেন স্বয়ং পরিচালক। এই ছবি সমাজের এমন এক সত্যিকে তুলে ধরে, যা একদিনে কঠিন বাস্তব, অন্যদিকে মর্মস্পর্শীও বটে। IAS পড়ার স্বপ্ন নিয়ে একজন ছাত্রের পড়তে আসা, তাতে অকৃতকার্য হওয়া এবং অবশেষে একজন সাংবাদিক হয়ে যাওয়া, সেই গল্পই বলবে এই ছবি। 


ছবির গল্প


এই গল্পের মুখ্যচরিত্রের নাম মনোজ। সেই চরিত্রে দেখা গিয়েছে বিক্রান্ত মেসিকে। চম্বলে থাকা এই চরিত্রটি একটি ভীষণ গরীব পরিবারেই বেড়ে ওঠে। মনোজের বাবা চাকরি হারায় তার সততার জন্যই। নিজের চেষ্টাতেই পড়াশোনা চালিয়ে যায় মনোজ। দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় বসলেও সে অকৃতকার্য হয়। সেই স্কুলে চিরকালই পরীক্ষার সময় দেদার নকল করা একেবারে প্রথায় পরিণত হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বারণ করতেন না, কারণ তাঁরা চাইতেন স্কুলটা চলুক। কিন্তু যে বছর মনোজ পরীক্ষায় বসে, একজন সৎ পুলিশ অফিসার এই বিষয়টি ধরে ফেলে। পরীক্ষায় নকল করা বন্ধ করায়, অকৃতকার্য হয়ে মনোজ। সেই ঘটনাই ঘুরিয়ে দেয় তার জীবনের মোড়। ওই পুলিশ অফিসারের মতো হওয়ার ইচ্ছা হয় মনোজের। পুলিশ অফিসার মনোজকে বলেন, তাঁর মতো হওয়ার জন্য মনোজকে ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সত্য ঘটনা নিয়ে তৈরি এই ছবি জুড়ে দেখানো হয়েছে, চম্বলের এক দরিদ্র ছেলের আইএএস হয়ে ওঠার গল্প। 


কেমন হল ছবিটি?


এই ছবিটি ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয় অনায়াসেই। পড়াশোনা শুরু করার সময়, অনেক শিশুদেরই সামনে রাখা হয় IAS বা IPS হওয়ার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে পড়াশোনা করেন অনেকেই, কেউ সফল হন, কেউ হন না। এই ছবি মনে করাবে সেই গল্পকেই। ছবিটি আপনাকে একইসঙ্গে যেমন কাঁদাতে পারে, তেমনই উদ্বুদ্ধ করতে পারে। মনোজের যে সফরকে তুলে ধরা হয়েছে তা সত্যিই সুন্দর। তবে প্রথমে যখন মনোজের জীবনে তার প্রেমিকা আসে, দর্শকদের মনে হতেই পারে, এই চরিত্র অপ্রয়োজনীয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের সেই ভুলও ভেঙে যাবে। বিশাল সেট নেই, আকর্ষণীয় গান নেই.. তারপরেও এই ছবিতে এমন কিছু রয়েছে যা মন ছুঁতে বাধ্য। 


অভিনয়


এই ছবির হাত ধরে বিক্রান্ত মেসি দেখিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে দর্শক এতদিন যতটা ভাল অভিনেতা ভাবতেন, তার থেকে অনেক গুণ প্রতিভাবান তিনি। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখে আন্দাজ হয়, কেবল অভিনয়ে ভর করে কিভাবে ছবি এগিয়ে যেতে পারে। যদি কোথাও কোনও ছবির ওয়ার্কশপ হয়, সেখানে অনায়াসেই বিক্রান্তের এই ছবিটি উদাহরণ হিসেবে দেখানো যেতে পারে। একজন গ্রামের ছেলের জীবনের ওঠাপড়াকে ভীষণ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বিক্রান্ত। এই ছবিটি তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি। বিক্রান্তের প্রেমিকার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মেধা শঙ্করকে। তাঁর অভিনয়ও অনবদ্য একথা বলতেই হয়। পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় প্রিয়াঙ্শু চট্টোপাধ্যায়ও অসাধারণ। বিক্রান্তের বন্ধুর ভূমিকায় অনন্ত বিজয়ও বেশ ভাল। বিকাশ দিব্যাকৃতির ভূমিকাও বেশ বাস্তবচিত। ছবিতে নিজের ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন তিনি তবে ক্যামেরার সামনেও তিনি বেশ সাবলীল। 


পরিচালনা


এই ছবিতে বিধু বিনোদ চোপড়ার থেকে দর্শককে গোটা ছবি জুড়ে সমানভাবে আকৃষ্ট করে রাখার ক্ষমতা শিক্ষণীয়। কোন অভিনেতা পর্দায় কতটুকু ব্যবহার করতে হবে, তার সঠিক পরিমাপ দেখিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। গোটা ছবিটা যথেষ্ট যত্ন নিয়ে বানানো হয়েছে। প্রথম ভাগে দর্শকদের মনে হয়ে পারে, এই ধরণের ছবিতে কেন প্রেমের বিষয়টাকে টেনে আনা হয়েছে। তবে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা দ্বিতীয় ভাগেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন পরিচালক। বিধু বিনোদ চোপড়ার সেরা ছবিগুলির মধ্যে এই ছবিটিতে অনায়াসেই বলা যায়।


মিউজিক


শান্তনু মৈত্রের মিউজিক এই ছবিকে প্রাণ দিয়েছে। ছবির মিউজিক বেশ ভালই ও ছবির মেজাজের সঙ্গে খুব সুন্দর খাপ খেয়ে যায়। তবে কিছু কিছু জায়গায় আবহসঙ্গীত কিছুটা চড়া বলে মনে হয়েছে। যেমন গম ভাঙার মেশিনের শব্দ বা ক্লান্ত হয়ে মনোজের হাঁফানির শব্দকে ঢেকে দিয়েছে আবহসঙ্গীত। এগুলো ছিল অপ্রয়োজনীয়। 


সব মিলিয়ে, এই ছবিটা অনায়াসে মানুষের মন ছুঁয়ে দিতে পারে, চোখে আনতে পারে জল। মনোজের সফরকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা আবেগপ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গে উদ্দিপ্ত করতে বাধ্য।


আরও পড়ুন: Tejas Film Review: দুর্বল চিত্রনাট্য, কঙ্গনার অভিনয়ও প্রশ্নের মুখে পড়ল 'তেজস'-এ