অমিত ভাটিয়া, নয়াদিল্লি: আয়ুষ্মান খুরানার (Ayushmann Khurrana) নতুন ছবির মুক্তি মানেই এবার নতুন কী করে দেখালেন তার অপেক্ষাতেই থাকেন দর্শক। অভিনেতা নিজের আলাদা একটা ঘরানা তৈরি করে ফেলেছেন এবং সেই কারণেই তাঁর থেকে প্রত্যাশাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তেমনই 'ডক্টর জি'র (Doctor G) ট্রেলার দেখেও আশা জেগেছিল দর্শকদের মনে।


'ডক্টর জি'র গল্প


এই ছবিতে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের (gynecologist) চরিত্রে দেখা গেছে আয়ুষ্মান খুরানাকে। মহিলাদের শারীরিক সমস্যার সমাধান করেন তিনি। এবার ডাক্তার নিজে পুরুষ, কিন্তু চিকিৎসা মহিলাদের, কীভাবে সম্ভব? এমনই মনে করে আয়ুষ্মানের চরিত্রও। একজন পুরুষ গাইনেকোলজিস্ট অর্থাৎ স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের সামনে কী কী সমস্যা আসতে পারে সেই গল্পই বলে এই ছবি।


ছবির প্রথম ভাগে দেখানো হয়েছে, আয়ুষ্মান হাড়ের ডাক্তার হতে চান কিন্তু সুযোগ পান গাইনেকোলজি ডিপার্টমেন্টে। স্বভাবতই খুবই অন্যমনস্ক হয়ে সেখানে কাজ করতে থাকেন তিনি যাতে পরের বছর তিনি ফের পরীক্ষা দিয়ে 'অর্থো'-এ সুযোগ পান। এখানে তাঁকে ব়্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়। সামনে অজস্র সমস্যা। ছবির দ্বিতীয়ার্ধ্বে দেখানো হয়েছে যে তিনি কীভাবে এই পেশাকে গ্রহণ করেন। এই গল্পের সঙ্গেই সমান্তরালে আরও একটা ঘটনা চলতে থাকে। যা দ্বিতীয়ার্ধ্বে দর্শককে বেশ আবেগঘন করে তুলবে। 


মোটের ওপর ছবির গল্প বেশ ভালই। ছবিতে সেই গল্প বেশ ভালভাবে ফুটিয়েও তোলা হয়েছে। একজন পুরুষ গাইনেকোলজিস্টের সঙ্গে রোগীরা কীভাবে ব্যবহার করেন, বা তাঁর নিজের মধ্যে কী কী চিন্তাভাবনা চলে তার বেশ একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে ছবি থেকে।


 



অভিনয়ের নিরিখে


বলাই বাহুল্য, ছবিতে দুর্দান্ত কাজ করেছেন আয়ুষ্মান খুরানা। ডাক্তার উদয় গুপ্তর চরিত্রে তিনি একেবারে 'পারফেক্ট ফিট'। আয়ুষ্মান খুরানার বিশেষত্বই হচ্ছে তাঁকে যখন পর্দায় দেখা যায় তখন অভিনেতা হিসেবে নয়, তাঁকে সেই চরিত্র হিসেবেই দর্শক উপভোগ করেন। এখানেও কোনও অপ্রয়োজনীয় 'হিরোগিরি' নেই। কোনও লম্ফঝম্প নেই। সবকিছুই প্রচণ্ড বাস্তব দেখতে লাগবে এবং আয়ুষ্মানের চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন দর্শক। ছবিতে আয়ুষ্মানের সিনিয়রের চরিত্রে দেখা গেছে শেফালি শাহকে। আর তাঁকে দেখে মনে হবে তিনি একজন সিনিয়র ডাক্তারই মাত্র। ওঁর অভিনয়ও একেবারে যথাযথ। চোখেমুখে কাঠিন্য দুর্দান্ত ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী। ছবিতে রয়েছেন রকুলপ্রীত সিংহ। তাঁকেও ডাক্তারের ভূমিকায় দারুণ মানিয়েছে। এই ছবির প্রেম কাহিনিও খানিক আলাদা ফলে বেশ অন্যরকমভাবে রকুলপ্রীতকে দর্শক দেখতে পাবেন। আয়ুষ্মানের মায়ের চরিত্রে রয়েছেন শিবা চাড্ডা এবং তাঁর অভিনয় নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই, এক কথায় দুর্দান্ত। বয়ষ্ক মহিলাদের কি নিজেদের মতো করে জীবনে বাঁচার অধিকার নেই? এই প্রশ্নই তোলে শিবা চাড্ডার চরিত্র, এবং তা একেবারে যথাযথ। সিনেমায় তাঁর চরিত্র একেবারে অন্যরকমের স্বাদ যোগ করেছে। তিনি পর্দায় আসা মানেই দর্শকের মুখে হাসি আসতে বাধ্য।


আরও পড়ুন: 'Phire Aye': তিন সাংবাদিকের গল্প নিয়ে আসছে 'ফিরে আয়', মুক্তি ২ ডিসেম্বর


ছবির পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন অনুরাগ কাশ্যপের বোন অনুভূতি কাশ্য়প। 'গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর', 'দেব ডি'র মতো ছবিতে সহ পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবির পরিচালক হিসেবে এটিই তাঁর প্রথম ছবি যা বেশ প্রশংসনীয়। এরপর তাঁর থেকে আরও দারুণ ছবির প্রত্যাশা করাই যায়। কোনও বড় জ্ঞান না দিয়েই মজার ছলে একটি বিষয় বলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক।


ছবির সঙ্গীতও বেশ ভালই। ছবির গতির সঙ্গে তা বেশ মানানসইও। ছবির গানও সঠিক সময়েই রয়েছে, কখনও বিরক্ত লাগবে না। সবমিলিয়ে এই ছবি দেখাই যায়। আয়ুষ্মান খুরানার ঘরানার ছবি পছন্দ করলে এই ছবি মিস করবেন না।