কলকাতা: সময়টা ছিল ৮ এর দশকের শুরুর সময়। কফি হাউসের সেই আড্ডাটা তখন সত্যিই জমজমাট ছিল। উত্তর কলকাতার এক ছেলে আরও অনেকের মতোই কফি হাউস থেকে খুঁজে পেয়েছিলেন অনেক বিদ্বজনের সান্নিধ্য। নতুন জীবনদর্শন। অধুনা তাঁর একের পর এক নির্দেশ রাজ্যে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। তিনি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। SSC এবং DA মামলার রায়কে কেন্দ্র করে, চর্চায় উঠে এসেছে তাঁর নাম। দুর্নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে তাঁচ বিচার। তাঁর নির্দেশে তাঁরই নির্দেশে তিন দফায় ১৮৭ জন চাকরিপ্রার্থী দুর্গাপুজোর মুখে শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি পেতে চলেছেন। । তাই তিনি অনেকের কাছেই মসীহা। আবার ঠিক এর বিরুদ্ধ মতও আছে একাংশের।
এই মানুষটির শিকড় কোথায় । এবিপি আনন্দ-র ( ABP Ananda ) সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে উঠে এল সেই ফেলে আসা পথের কথা।পিছু হাঁটলে যে রাস্তা নিয়ে যাবে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে। আরও পিছু হাঁটলে ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনে। একদম খাঁটি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়া এক ছাত্র অসম্ভব ভঙ্গুর এক রাস্তা পেরিয়ে প্রথমে নিজেকে ডবলুবিসিএস অফিসার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আবার সেখানে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় ফিরেছেন আইনি পেশায়। হয়েছেন সফল আইনজীবী থেকে প্রথিতযশা - ব্যতিক্রমী এক বিচারপতি।
১৯৭৯ সালে মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে পাশ করা ছাত্র লম্বা পথ পেরিয়ে আজ বিচারপতি ! জানালেন, আইনের প্রতি ভাললাগা থেকে নয়। বাবা মারা যান কম বয়সেই। বাঙালি মধ্যবিত্ত সংসারে তখন সে-ছেলের উপর অনেক চাপ ! কী করবেন বুঝতে পারছেন না। মন চাইছিল পড়াশোনার মধ্যে থাকতে, তাই হাজরা ল কলেজে ভর্তি হয়ে যাওয়া। জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, সে-সময় সহপাঠি হিসেবে পেয়েছিলেন এমন অনেককে যাঁরা বদলে দিয়েছিলেন জীবনদর্শন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, অধুনা মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি , কলকাতা হাইকোর্টের অনেক প্রথিতযশা বিচারপতিদের। বিচারক জয়মাল্য বাগচী, বিচারপতি দেবাংশু বসাক, বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ প্রমুখ।
আরও পড়ুন :
ভেবেছিলাম রুল ইস্যু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডাকব, এবিপি আনন্দে বিস্ফোরক বিচারপতি
প্রথমেই আইনচর্চার কথা ভাবেননি তিনি। বরং পেয়েছিলেন সরকারি চাকরি। ডবলুবিসিএস অফিসার। উত্তরবঙ্গে পোস্টিং। কিন্তু নীতিনিষ্ঠ মানুষটির সেখানে গিয়েও বাঁধল সংঘাত। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কর্মীরা চাপ দিতে থাকে, নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে পাট্টা দিতে হবে বলে ! কিন্তু তা করতে রাজি হননি তিনি। চাপের মুখে করেননি নতিস্বীকার। অবশেষে চাকরিটাই ছাড়েন তিনি। এরপর তিনি এসে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর মতো প্রথিতযশা বিচারপতি বললেন, ভেবেছিলাম ৫০০ টাকা রোজগার করলেও চালিয়ে নেব, জজ হওয়ার কথা তো ভাবিইনি।
কীভাবে পারলেন এত বড় ঝুঁকি নিতে ? অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, বাবা মারা যাওয়ার পর এতটা দুঃসময় দেখেছেন তিনি তা থেকেই বোধ হয় পেয়েছিলেন, শক্তি, সাহস।