কলকাতা: পুজোর বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। এমন সময় শুধু কলকাতায় নয়, সারা রাজ্যের পটুয়া পাড়াতেই কাজ চলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। শেষ তুলির টান, চক্ষুদান। প্রতিমার চুল লাগানো, সাজ তৈরির কাজ চলে দিনভর। আর তো দিন কয়েকের মধ্যেই মণ্ডপে পৌঁছে যাবে প্রতিমা। আর সময় কোথায়?
কিন্তু এবছরের বিষয়টিই এক্কেবারে আলাদা। দেশজুড়ে আর্থিক মন্দা তো চলছিলই। তার উপর করোনা কাঁটা। মার্চের শেষ থেকে দেশজুড়ে লকডাউন। বন্ধ হয়ে যায় প্রতিমা তৈরির কাজ। যেটুকু বা অর্ডার আসছিল, তাও অনেকেই স্থগিত করে দেন। বড়সড় অর্থনৈতিক ধাক্কায় কার্যত পর্যুদস্ত সকলেই। পুজোর ভবিষ্যতই ছিল অনিশ্চিত। সরকারি তরফে এখন নির্দেশিকা প্রকাশিত হলেও, আর্থিক ধাক্কা সামলে পুজো করার খরচ করার পরিস্থিতিতেই নেই বহু কমিটি।

কলকাতার বড় বড় পুজোগুলিতেও বাজেটে কাটছাঁট। আর বহু ছোট পুজো তো এছর বন্ধই। যারা পুজোর আয়োজন করছেও, তারাও বাজেট কমিয়ে ফেলেছে ভয়ঙ্কর হারে। বরাত দিয়েছে কম উচ্চতার  প্রতিমারই।
কলকাতার কুমারটুলির প্রতিমা শিল্পী মালা পাল জানালেন, প্রতিবছর যেখানে ৪২ টা ঠাকুর গড়ি, এ বছর গড়ছি ১৭-১৮ টি। কুমারটুলির বহু শিল্পীই জানেন না, সারা বছরের রুজি রোজগার চলবে কী করে। অন্নপূর্ণা পুজোয় ঠাকুর তৈরি হওয়ার পরও পুজো হল না। পয়লা বৈশাখে লক্ষ্মী গণেশও বিক্রী হল না। একের পর এক ক্ষতিই হচ্ছে শুধু, আফশোস প্রতিমাশিল্পীর গলায়।

একইরকম পরিস্থিতি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। দুর্গাপুজোর রোজগারের উপর ভরসা করেই সারা বছর হাঁড়ি চড়ে বহু পরিবারের। ঠাকুরের অর্ডার আসে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এবার আগে থেকে বায়না প্রায় আসেইনি।  কৃষ্ণনগরের পটুয়াপাড়ার সার্বিক পরিস্থিতির কথা জানালেন প্রতিমাশিল্পী সুবীর পাল। তাঁর কথায়, ' লকডাউনে তো কাজই বন্ধ ছিল, যেগুলো আগেই অর্ডার এসেছে সেগুলির কথা আলাদা। তারপর তো আর বরাত আসেনি। দিন পনেরো আগে কয়েকটি ঠাকুরের বরাত এল। তাও বলল ছোট করে তৈরি করে দিন। তাহলেই বুঝুন। '
সেই সঙ্গে কঠিন পরিস্থিতি মাটির পুতুল বিক্রেতাদেরও। বন্ধ পর্যটন। কৃষ্ণনগরে মাটির পুতুল কেনার লোক কই?  পেটের ভাত জোগাড় করতে অনেকে বিক্রি করছেন সবজি, চালাচ্ছেন টোটো।
'কিন্তু প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা তো অন্য কাজ করতে পারেন না!', বললেন প্রখ্যাত প্রতিমা শিল্পী সুবীর পাল।

প্রতিমাশিল্পী সুবীর পাল

চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

তবে এরই মধ্যে ভাল খবর, বরাত এসেছে শিকাগো কালীবাড়ি থেকে। চলছে ফাইবারের রাম-সীতা সহ অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি তৈরির কাজ। মূর্তি জাহাজে করে পার করবে সমুদ্র।



এই মুহূর্তে সরকারি সাহায্যের দিকেই তাকিয়ে মৃৎশিল্পীদের একাংশ। '' সরকারের সাহায্য ছাড়া কী উপায়?  আমাদের এখনও সরকারি ঘোষণা আসেনি। প্রতিবছরই কাঁচা মালের দাম বাড়ছে। কিন্তু এবার পুরনো দামেরই অর্ধেক চাইতে পারছি না। কম বাজেটে ঠাকুর গড়ে দিন, এমন বায়না আসছে। বিদেশেও ঠাকুর যাচ্ছে না। '', আক্ষেপের সুর শিল্পীর গলায়।

হাওড়ার উলুবেড়িয়ার ছবি

হাওড়ার উলুবেড়িয়ার ছবি

হাওড়ার উলুবেড়িয়ার ছবি

হাওড়ার উলুবেড়িয়ার পটুয়া পাড়ার চিত্রটিও একইরকম। অধিকাংশ ক্লাব স্থানীয় গোলাতে প্রতিমা তৈরীর বরাত দিয়েছে। কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। কিন্তু প্রতিমা শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এবছর বায়না হয়েছে কম উচ্চতার প্রতিমার। যে সব কমিটি ১২-১৫ ফুটের ঠাকুর পুজো করেন, এবছর তাঁরাই অর্ডার করছেন ৬-৭ ফুটের ঠাকুর। কাঁচামালের দাম বাড়লেও এ বছরে প্রতিমার দাম বাড়ানো যাচ্ছে না।

(হাওড়ার তথ্য: সুনীত হালদার)