ইনদওর: অদম্য জেদ আর মনোবলকে সম্বল করেই মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের বাসিন্দা শুভাঙ্গী পাটিল দারুণ ভাল রেজাল্ট করলেন। অভাব ছিল তার সঙ্গী। বাবা চলে গিয়েছেন বছর দশেক আগে। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে শিবরাজ সিং চৌহান সরকারের কাছে থেকে পুরস্কার পেতে চলেছেন।
বাবাকে চলে যাওয়ার পর থেকে সংসারের হাল ধরেন মা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে যা রোজগার হতো তাই দিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্টেশিষ্টে চলত সংসার। কিন্তু করোনার ধাক্কা বদলে গেল জীবনটা।
লকডাউন চলাকালীন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাদের মা। রোজগারে টান। ভাঁড়াড়ে মাত্র ৫০০ টাকা। অসু্স্থ মাকে নিয়ে দিশেহারা মেয়ে ছুটলেন দূরে মামার বাড়িতে। শুভাঙ্গীর কথায়, ’’আমাদের কাছে তখন মাত্র ৫০০ টাকা রয়েছে। ঠিক করলাম মাকে মামার বাড়িতে রেখে আসব। মামা অন্তত হাসপাতালের খরচটা দিতে পারবে। স্কুটিতে চাপিয়ে কম্বল দিয়ে মাকে আমার সঙ্গে বেঁধে ৩০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছলাম মহারাষ্ট্রের চোপড়ায় মামার বাড়িতে।‘‘
মাকে রেখে পরীক্ষার জন্য বাড়ি ফিরে এসেছিলেন শুভাঙ্গী। কিন্তু এত করেও মাকে বাঁচাতে পারেননি। লকডাউন চলাকালীন জুনে মারা যান শুভাঙ্গীর মা।
এত কষ্টের মধ্যে রীতিমতো লড়াই করে দ্বাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় বসেছিলেন শুভাঙ্গী। ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। ভাল রেজাল্টের পুরস্কার সরূপ মধ্যপ্রদেশ সরকারের কাছ থেকে ল্যাপটপ বাবদ ২৫ হাজার টাকা পেতে চলেছেন তিনি। সরকারের নিয়ম অনুসারে যেসব পড়ুয়া দ্বাদশ শ্রেণিতে ৮৫ শতাংশের বেশি নম্বর পাবেন, তাঁরাই এই স্কিমে ল্যাপটপ পাওয়ার যোগ্য। ইনদওর ডিভিশনের স্কুল শিক্ষা দফতরের জয়েন্ট ডিরেক্টর মণীশ ভার্মা জানিয়েছেন যে সব ছাত্রছাত্রীরা এই পুরস্কার পেতে চলেছেন, তাদের ১০ শতাংশ একেবারে মামুলি পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছেন।
পুরস্কার, সাফল্যের মাঝেও শুভাঙ্গীর মন আজ ভারাক্রান্ত। তাঁর এই সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না মা। চিকিৎসার জন্য অত দূর দৌড়ে গিয়েও ফিরিয়ে আনতে পারলেন না মা-কে।