নয়াদিল্লি: ‘আমি যৌন নির্যাতনের শিকার হই। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাকেই অভিযুক্ত হিসেবে আদালতে যেতে হয়েছে।’
আজ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ জে আকবরের দায়ের করা মানহানির মামলায় দিল্লির একটি আদালত থেকে রেহাই পাওয়ার পর এমনই মন্তব্য করলেন সাংবাদিক প্রিয়া রমনী। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমার পক্ষে ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে যে দু’জন আমার হয়ে সাক্ষ্য দেন। তাঁরা হলেন গজলা ওয়াহাব ও বেঙ্কটরমন। এই রায় দেওয়ার জন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাই। আমার আইনজীবী রেবেকা জনকেও ধন্যবাদ জানাই।’
আজ আদালতে প্রিয়ার পক্ষে রায় দিতে গিয়ে অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারক রবীন্দ্র কুমার পাণ্ডে বলেন, ‘প্রিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারও মর্যাদার বিনিময়ে অন্য কারও খ্যাতি বজায় রাখার অধিকার থাকতে পারে না। কয়েক দশক পরেও একজন মহিলার অভিযোগ জানানোর অধিকার আছে।’
এদিন রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি রামায়ণ ও মহাভারতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ভারতে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, এটা লজ্জাজনক। একজন মহিলার মর্যাদা রক্ষার ঘটনা দেখিয়ে এখানে দু’টি মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত লেখা হয়েছিল। রামায়ণের অরণ্যকাণ্ডে সীতাকে রক্ষা করার জন্য রাবণের সঙ্গে লড়াই করেন জটায়ু। লক্ষ্মণকে যখন সীতার বর্ণনা দিতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, কোনওদিন সীতার পায়ের উপরে তাকাননি। মহিলাদের প্রতি সম্মান ভারতের নীতির জরুরি অংশ।
বিচারপতি আরও বলেন, ‘মানহানির অজুহাতে একজন মহিলাকে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্য শাস্তি দেওয়া যায় না। কয়েক দশক পরেও যে কোনও মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করার অধিকার আছে একজন মহিলার। প্রিয়া রমনীর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সেই কারণে তাঁকে রেহাই দেওয়া হচ্ছে।’
আদালত আরও বলেছে, ‘এম জে আকবরের সামাজিক মর্যাদা আছে। কিন্তু সামাজিক মর্যাদাযুক্ত একজন ব্যক্তিও যৌন হেনস্থাকারী হতেই পারেন। যৌন হেনস্থা মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস কেড়ে নেয়। বেশিরভাগ মহিলাই মর্যাদা রক্ষা করার জন্য যৌন নির্যাতনের বিষয়ে কিছু বলেন না। কারণ, তাঁদের পরিবার আছে। তাঁদের ট্রমার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।’