নয়াদিল্লি: কোভিড-১৯ এমার্জেন্সি ফান্ডে পাকিস্তানের অবদান শূন্য। তা সত্ত্বেও, এই তহবিলের খরচে স্বচ্ছতা দাবি করল ইসলামাবাদ। এখানেই শেষ নয়। পাকিস্তানের দাবি, এই তহবিলের খরচের বিষয়টি তদারকি করুক সার্কের বর্তমান মহাসচিব তথা শ্রীলঙ্কার কূটনীতিক এসালা রুয়ান বীরাকুন।
গত ১৫ মার্চ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে ভিডিও কনফারেন্সেরম মাধ্যমে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ ও তার মোকাবিলা নিয়ে আলোচনায় বসেছিল সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলি। সেখানেই একটি আপৎকালীন তহবিল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন মোদি। ভারত এই তহবিলে ১ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে।
ভারতের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সার্কের একাধিক দেশ নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী অনুদান দেয় তহবিলে। যেমন, শ্রীলঙ্কা দিয়েছে ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার, নেপাল ও আফগানিস্তান দিয়েছে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ দিয়েছে ১৫ লক্ষ মার্কিন ডলার। আবার মলদ্বীপ ও ভূটান দিয়েছে যথাক্রমে ২ লক্ষ ও ১ লক্ষ মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে, পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত ওই তহবিলে এক নয়া পয়সাও দেয়নি। সেখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহলে। বলা হচ্ছে, ভূটান ও আফগানিস্তানের মত দেশ যদি ডোনেশন দিতে পারে, তাহলে পাকিস্তান কেন পারবে না? সকলেই জানে আফগানিস্তান ও ভূটানের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন। তা সত্ত্বেও তারা নিজেদের সাধ্যমতো অনুদান দিয়েছে। অথচ, এই মারণ ভাইরাসের জন্য ইসলামাবাদ এক পয়সাও ঢালেনি।
ইতিমধ্যেই, করোনাভাইরাসের ছোবলে বিশ্বব্যাপী ২০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ। পাকিস্তান যে এই ভাইরাসের হানা থেকে বাদ গিয়েছে এমন নয়। সেখানেও আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের এই মনোভাব ভাল চোখে দেখছে না সার্ক রাষ্ট্রগুলি। বিশেষ করে, মোদির আহ্বানে হওয়া বৈঠকে সব দেশের রাষ্ট্রনেতারা উপস্থিত থাকলেও, পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাফর মির্জা-- যাঁর বিরুদ্ধে ২ কোটি মাস্ক চোরাচালান করার অভিযোগে তদন্ত চলছে।
১৫ তারিখের ওই বৈঠকে, সকলে যখন মহামারীর আকার নেওয়া করোনাভাইরাসের মোকাবিলা নিয়ে চিন্তা ও মতামত আদানপ্রদান করছিলেন, সেই সময় পাকিস্তান কাশ্মীর-প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। কূটনৈতিক মহলের খবর, এতে বিস্মিত হন বৈঠকে উপস্থিত থাকা বাকি রাষ্ট্রনেতারা।
তবে, পাকিস্তান মুখে কাশ্মীরের মানবাধিকারের প্রশ্ন তুললেও, নিজেদের দেশে করোনা-আক্রান্তদের জন্তুর থেকেও খারাপভাবে রেখেছে প্রশাসন। খবরে প্রকাশ, ইরান থেকে দেশে ফেরা পাকিস্তানিদের যে অস্থায়ী কোয়ারান্টিন শিবিরে রাখা হয়েছে, তার অবস্থা ভয়াবহ। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অভিযোগ, পশুর থেকেও খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনেকে অভিযোগ করেন, তাঁদের খারাপ পচা খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে। কম্বল দেওয়া হচ্ছে না। আক্রান্তদের খোলা আকাশের তলায় মুক্ত-কারাগারে রাখা হয়েছে। ন্যূনতম পরিষেবাও তাঁরা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তানে একটি কোয়ারান্টিন শিবির খুলেছে পাক প্রশাসন। এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, পাক সেনা ইচ্ছে করে ওই ভাইরাস তাদের এলাকায় এনে ফেলছে।