নয়াদিল্লি: গত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থব্যবস্থা। এমনই আশঙ্কামূলক মন্তব্য নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমারের। তাঁর মতে, এর মোকাবিলা করতে সরকারকে চলতি ধারনার বাইরে গিয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এই প্রেক্ষিতে মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। এদিন তিনি টুইটারে লেখেন, সরকারের নিজের লোকই এখন স্বীকার করছে যে, দেশের অর্থাবস্থা গভীর সঙ্কটে রয়েছে। তিনি কেন্দ্রকে বলেছেন, লোভীদের হাতে নয়, অবিলম্বে যাঁদের টাকার সত্যিই প্রয়োজন, তাঁদের হাতে টাকা তুলে দিতে। তিনি যোগ করেন, কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রকে অর্থনীতির দুরবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করে আসছিল। আর এখন তো সরকারের নিজের লোকই সেই কথা স্বীকার করলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের উচিত আমাদের দেওয়া সমাধানসূত্রকে গ্রহণ করা।
নীতি আয়োগের উচ্চকর্তার এই সতর্কবাণীর পরই কেন্দ্রকে তোপ দাগতে রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ হন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। টুইটে তাঁর কটাক্ষ, অর্থনীতি আইসিইউ-তে রয়েছে। আর সরকার নাগরিক স্বাধীনতার হয়ে সওয়ালকারীদের লুকআউট নোটিস পাঠাচ্ছে। সিব্বলের ইঙ্গিত যে পি চিদম্বরমকে ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির দিকে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে তিনি বলেন, দেশ ও কেন্দ্রের সামনে একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতি এসে উপস্থিত হয়েছে। গত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতি আগে কখনও আসেনি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করছেন না। বেসরকারি ক্ষেত্রে কেউ ধারে ব্যবসা করছে না। সকলেই হাতে নগদে কারবার করছে।
এই উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বের করতে সরকারকে কিছু অভাবনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই অচলাবস্থা কাটাতে প্রচুর সাহসের প্রয়োজন। আমরা এমন একটা সিস্টেমে থাকি, যেখানে প্রতিনিয়ত সাহসী হতে বলা হয়। ফলে, আমার মতে, এখন সরকারের উচিত বেসরকারি সেক্টর থেকে এই ভীতি দূর করতে যা যা করা সম্ভব তা কার্যকর করা।
রাজীব যোগ করেন, বেসরকারি সেক্টরে যে দেনা বকেয়া রয়েছে, তা আটকে রাখার কোনও যৌক্তিকতা নেই সরকারের। সবপক্ষ মিলে এই অচলাবস্থা বা অনিশ্চয়তা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে বটে। সকলে মিলে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্স সেক্টরের যাবতীয় আশঙ্কা দূর করতে সচেষ্ট হয়েছে সরকার, যা একটা ইতিবাচক দিক।
নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যানের মতে, বেসরকারি সেক্টরের ভীতি দূর করাটা গুরুত্বপূর্ণ। যাতে বেসরকারি ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ আসতে পারে। তিনি জানান, আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে কেন্দ্রীয় বাজেটে একাধিক পদক্ষেপের ঘোষণা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন ৬.৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
যদিও, দেশের এই আর্থিক মন্দার নেপথ্যে ২০০৯-১৪ সালে বেলাগাম ঋণদানকেই দায়ী করেছেন রাজীব। তাঁর দাবি, এর ফলে, ব্যাঙ্কের নন-পারফর্মং অ্যাসেট (এনপিএ) হু-হু করে বেড়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি জর্জরিত হয়ে পড়ে। তার ওপর, নোটবন্দি, জিএসটি ও দেউলিয়া নীতির পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার সহজ পদ্ধতি নেই। ফলে, সরকারকে কোনও অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভারতের আর্থিক অবস্থার হাল হকিকৎ ফুটে উঠেছে মুডি’জ-এর রিপোর্টেও। ২০১৯ সালের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) হারের পূর্বাভাসকে ৬.৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.২ শতাংশ করেছে এই আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা। পাশাপাশি, ২০২০ সালের জন্যও তারা হার কমিয়ে ৬.৭ করেছে।