কাবুল: ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। এবার চিনের আরও কাছাকাছি আফগানিস্তান। চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে এবার দেখা যাবে তাদের। আগামী সপ্তাহে চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম সম্মেলন রয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের আধিকারিকরা। শনিবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হল তার। (China Afghanistan Relations:)


দু'বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেয়নি চিন-সহ কোনও দেশের সরকারই। কিন্তু গত দু'বছরে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক যে মজবুত হয়েছে, লাগাতার সেই খবর উঠে আসছিল। চিনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন তালিবান সরকারের আধিকারিকরা। এতদিন যদিও তাতে আফগানিস্তানের স্বার্থ জড়িয়ে ছিল। (Belt And Road Forum)


কিন্তু বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সেখানে তালিবান আধিকারিকদের উপস্থিতি উপমহাদেশীয় রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী সপ্তাহের মঙ্গল এবং বুধবার বেজিংয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম সম্মেলন রয়েছে। চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং সিল্ক রুটকে বিশ্ব বাণিজ্য করিডর হিসেবে গড়ে তোলার যে লক্ষ্য রেখেছিলেন, আগামী সপ্তাহে তার ১০ বছর পূর্তিও। সেখানে আমন্ত্রিত আফগানিস্তানের তালিবান আধিকারিকরাও। 


আরও পড়ুন: Adani Group: ‘কয়লার দাম বাড়িয়ে ৬০০০ কোটি পকেটে, বিদ্যুৎবাবদ মাশুল গুনেছেন মানুষ’, ফের কাঠগড়ায় আদানিরা


আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী হাজি নূরউদ্দিন আজিজি বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম সম্মেলনে হাজির থাকবেন। তাঁর মন্ত্রকের মুখপাত্র আখুন্দজাদা আব্দুল সালেম জাওয়াদ শনিবার এই ঘোষণা করেন। শুধু সম্মেলনে হাজিরা দেওয়াই নয়, আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করতে শিল্পপতিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও জানানো হয়েছে।২০১০ সালে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আফগানিস্তানের খনিতে মজুত সোনা, লিথিয়াম, তামার মূল্য প্রায় ১ থেকে ৩ লক্ষ কোটি ডলার ছিল। বর্তমানে তার মূল্য আরও বেড়েছে। এই খনিজ সম্পদ নির্ভর শিল্প গড়ে তুলতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যাচ্ছেন নূরউদ্দিন।


এখনও পর্যন্ত যে খবর মিলেছে, সেই অনুযায়ী, আফগানিস্তানের পূর্বে তামার খনি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে চিনের। এর পাশাপাশি, অন্য সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হবে দুই দেশের মধ্যে। চিনের তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে আফগানিস্তানের উত্তরের ওয়াখান করিডরকে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে বলেও খবর। এতে সরাসরি আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যপথে সংযুক্ত হবে চিন। চিন-পাকিস্তান-আফগানিস্তান করিডরের পক্ষে সওয়াল উঠছে বেশ কিছু দিন ধরেই। 


দু'বছর আগে আমেরিকা সমর্থিত আশরফ গনি সরকারকে উৎখাত করে আফগানিস্তানে ফের ক্ষমতা দখল করে তালিবান। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও দেশই তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিদেশ থেকে অনুদান আসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে মহিলাদের উপর হাজারো নিষেধাজ্ঞা চাপানোয়, আরও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে আরও বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে তালিবানকে।


কিন্তু গোটা পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে নিলেও, আফগানিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে লাগাতার চেষ্টা-চরিত্র চালিয়ে যাচ্ছে চিন। তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা ওঠার পর থেকে চিনই একমাত্র দেশ, যারা কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে। খনি প্রকল্পে ইতিমধ্যে বিনিয়োগও এসেছে বেজিং থেকে। শুধু তাই নয়, তালিবানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের নথিপত্রও জমা দেন চিনের রাষ্ট্রদূত। 


যদিও চিন এবং আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের এই সখ্য, ভারতের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতায় ফেরার আগে পর্যন্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুবিধাজনক জায়গায় ছিল। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আফগানিস্তানে বিনিয়োগও করছিল ভারত। হামিদ কারজাই এবং আশরফ গনি, দুই প্রাপ্কতন প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই ভাল বোঝাপড়া ছিল দিল্লির। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত থেকেই সবথেকে বেশি অর্থসাহায্য় পেত আফাগনিস্তান, প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। জারাঞ্জ থেকে দেলারমে ২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কপথ নির্মাণ থেকে ১১টি প্রদেশে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ গড়ে তোলা, টেলিভিশন নেটওয়র্কের বিস্তৃতি, সবকিছুতেই দিল্লি যুক্ত ছিল।


২০১৫ সালে তৎকালীন গনি সরকারকে নয়া সংসদও গড়ে দেয় ভারত। স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্য়ালয় স্থাপনের কাজও সারা হয়। কিন্তু তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরার পর একাধিক প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেয় ভারত।  তালিবানের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখা দিতে শুরু করতেই সেখানে ভারতীয় কনস্যুলেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২২ সালের জুলাি মাসে কাবুলে ফের ভারতীয় দূতাবাস খোলা হলেও, কনস্যুলেট আজও বন্ধ। সেই আবহেই অতি সম্প্রতি ভারত ছেড়ে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন এতদিন ধরে দিল্লিতে মোতায়েন থাকা গনি সরকারের রাষ্ট্রদূত এবং আধিকারিকরা। ফলে কৌশলগত দিক থেকে  আফগানিস্তান এবং চিনের এই সৌহার্দ্য ভারতের জন্য সুখবর নয় বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।