ইম্ফল: নতুন করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মণিপুর। মারামারি, অগ্নিসংযোগ বা গুলিবৃষ্টি নয়, এবার রকেট হামলা চলল সেখানে। রকেট হামলায় মারা গিয়েছেন এক বৃদ্ধ। কুকি উগ্রপন্থীদের তরফে এই রকেট হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। হামলায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন। আহতদের মধ্যে রয়েছে ১৩ বছরের এক কিশোরীও। গত পাঁচ দিনে এই নিয়ে ড্রোন এবং রকেট হামলায় দুই নাবালিকা আহত হল। 


মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে, বিষ্ণুপুর জেলার মইরাং শহরে এই ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ভোরবেলা আর কে রাবেই সিংহ নামের ৭০ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধ বাড়িতেই ছিলেন। ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনা সারছিলেন। সেই সময় রকেট এসে আছড়ে পড়ে। তীব্র বিস্ফোরণ ঘটলে মারা যান তিনি। 


জানা গিয়েছে, যে বাড়িতে আছড়ে পড়ে রকেটটি, সেটি রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মইরেম্বাম কোইরেং সিংহের বাড়ি। ওই বাড়ির অদূরে, ১০০ মিটার দূরেই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (INA)-র মিউজিয়াম রয়েছে, যা মইরাং শহরের প্রাণকেন্দ্রও বটে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম বিশুদ্ধ জলের হ্রদ লোকটাকের তীরে অবস্থিত মইরাং শহর। 



INA-র মিউজিয়ামটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করে নির্মিত। মণিপুরের মইরাং শহরেই প্রথম INA-র পতাকা উত্তোলিত হয় ১৯৪৪ সালের ১৪ এপ্রিল। রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মইরেম্বাম স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন এবং তিনিও INA-র সদস্য ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জেলবন্দিও হন তিনি। পরবর্তীতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী হন।


স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, সম্ভবত INA মিউজিয়াম লক্ষ্য করেই রকেট হামলা চালানো হয়েছিল। পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতলে রকেটটি ছোড়া হয় বলে জানা যাচ্ছে। হামলায় যে বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন, তিনি মেইতেই সম্প্রদায়ের।  রকেট থেকে শার্পনেল ছিটকে তাঁর মাথায় আঘাত করে বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।  ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই বৃদ্ধ। ফুল-ফল নিয়ে পুজোয় বসেছিলেন তিনি। দেহটি যখন উদ্ধার করা হয়, রক্তে ভেসে যাচ্ছিল চারিদিক। ধুতি এবং গায়ে সাদা চাদর জড়িয়ে তিনি পুজোয় বসেন বলে জানা গিয়েছে।


এই হামলার পর আবারও স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে মণিপুর সরকার। কারণ এই নিয়ে দ্বিতীয় রকেট হামলা চলল সেখানে।  শুক্রবারই মইরাং জেলাতেই দু'টি রকেট হামলা হয়। চূড়াচাঁদপুর, যা কি না কুকি অধ্যুষিত, সেখান থেকে উগ্রপন্থীরা হামলা চালানো হয় বলে জানা যায়। ওই হামলায় দু'টি নির্মাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রকেট হামলার পাশাপাশি, গুলিবর্ষণও চলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।


এর আগে, বৃহস্পতিবার কুম্বি জেলায় আকাশে একাধিক ড্রোন উড়তে দেখেন স্থানীয়রা। তার আগের রবিবার আবার ড্রোন হামলা এবং এলোপাথাড়ি গুলিবৃষ্টিতে দু'জন মারা যান। বেশ কয়েক জন আহত হন, যার মধ্যে ১২ বছরের এক মেয়েও ছিল। সোমবার সেনজম চিরাংয়ে ড্রোন বোমা ফেলা হলে তিন জন আহত হন। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মণিপুরে ড্রোন হামলার পাশাপাশি, স্নাইপার রাইফেলের ব্যবহারও হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রবিবার বোমা ফেলতে যে ড্রোনের ব্যবহার করা হয়, ভারতে উগ্রপন্থী হামলার ইতিহাসে তা এই প্রথম। আগে কখনও ড্রোন হামলা চালায়নি উগ্রপন্থীরা।