Ahmedabad Plane Crash: মায়ের ত্বকে জীবন-সঞ্জীবনী, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল ৮ মাসের শিশু, পুড়ে গিয়েছিল আমদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায়
Air India Plane Crash: গত ১২ জুন গুজরাতের আমদাবাদে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমান।

আমদাবাদ: নয় নয় করে দেড় মাস পার। তবে ক্ষত এখনও শুকোয়নি পুরোপুরি। সেই আবহেই বিপন্মুক্ত হল আট মাসের শিশু। আমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা কনিষ্ঠতম লড়াকু। তবে ছেলে এই যুদ্ধজয় করতেই পারত না, যদি না মা নিজেকে বাজি রাখতেন। (Ahmedabad Plane Crash)
গত ১২ জুন গুজরাতের আমদাবাদে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমান। বিমানে সওয়ার ২৪১ জন মারা গিয়েছেন দুর্ঘটনায়। লোকালয়ে বিমান ভেঙে পড়ায় আরও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ওই দুর্ঘটনা থেকে মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে আট মাসের ধায়াংশ। (Air India Plane Crash)
ভেঙে পড়ার আগে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের দেওয়ালে ধাক্কা মারে এয়ার ইন্ডিয়ার IC 171 বিমানটি। BJ Medical College-এর ইউরোলজি বিভাগের ছাত্র কপিল কাছাড়িয়া। তিনিও ওই হস্টেলেই থাকতেন। দুর্ঘটনার সময় হাসপাতালে ডিউটি করছিলেন কপিল। শিশুসন্তান ধায়াংশকে নিয়ে হস্টেলে ছিলেন মনীষা।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কপিল জানিয়েছেন, বিমানটি ভেঙে পড়লে মনীষাও আহত হন। কিন্তু কোলের সন্তানকে বাঁচানোই প্রধান লক্ষ্য ছিল তাঁর। তাই আগুনের লেলিহান শিখা যখন গা পোড়াচ্ছে, ধোঁয়ায় যখন ঢেকে গিয়েছে চারিদিক, সেই সময় ছেলের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান মনীষা। নিজের শরীর দিয়ে ছেলেকে আড়াল করেন।
জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পর ঘর তেতে উঠলে ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে বেরোতে যান মনীষা। কিন্তু আগুন ছ্যাঁকা দিচ্ছিল গায়ে, ধোঁয়ায় দেখা যাচ্ছিল না কিছুই। আগুনের তাপ মায়ের গায়েও লাগছিল, লাগছিল ছোট্ট ছেলেটির গায়েও। স্মৃতিচারণ করে মনীষা জানিয়েছেন, বেঁচে ফিরবেন বলে ভাবতে পারেননি। কিন্তু ছেলের কথা ভেবেই দৌড় লাগিয়েছিলেন। যে যন্ত্রণার সইতে হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, বিমান ভেঙে পড়ার পর আগুনের তাপে মনীষার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে যায়। হাত, মুখ পুড়ে যায় তাঁর। ছোট্ট ধায়াংশের শরীরের ৩৬ শতাংশ পুড়ে যায়। মাথা, হাত, বুক, পেটের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল মনীষা ও ধায়াংশকে। ধায়াংশকে রাখা হয় PCIU-তে। শ্বাস-প্রশ্বাস যাতে চলে, তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। চলে আইভি, দেওয়া হয় রক্ত। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয় শিশুটিকে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছোট্ট ধায়াংশের বয়স এতটাই কম যে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছিল। তার ক্ষত সারানোর জব্য স্কিন গ্রাফটিং-এর প্রয়োজন ছিল। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত জায়গার চামড়া তুলে ফেলে অন্য চামড়া বসানো। এক্ষেত্রে ছেলের জন্য এগিয়ে আসেন খোদ মনীষাই। নিজের ত্বক ছেলেকে দান করেন তিনি। অর্থাৎ আবারও ছেলেকে রক্ষা করতে ঢাল হয়ে এগিয়ে এলেন।
কেডি হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অদিত দেসাই জানিয়েছেন, মায়ের সাহসের জন্যই সন্তান রক্ষা পেল। হাসপাতালের সকলেই শিশুটির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বলেও জানান তিনি। প্লাস্টিক সার্জন রুতবিজ পারেখ জানিয়েছেন, পোড়ার ক্ষত সারাতে শিশুর শরীরে মায়ের ত্বক ব্যবহার করা হয়। সংক্রমণ নিয়েও সতর্ক থাকতে হয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে স্থিতিশীল রয়েছেন মনীষা। সুস্থ ধায়াংশও। গত সপ্তাহেই হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়।
স্ত্রী এবং ছেলেকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কপিলও। মাঝরাতে উঠেও ড্রেসিং করেন তিনি। দুর্ঘটনার তীব্রতায় ধায়াংশের ফুসফুসের একদিকে গিয়ে জমা হয়েছিল রক্ত। তার জন্যই ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়েছিল তাকে। পাঁচ সপ্তাহ ধরে চিকিৎসার পর দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মা মনীষার জন্যই ছোট্ট ধায়াংশ এই লড়াইয়ে সফল হল বলে মত চিকিৎসকদেরও।






















