সমীরণ পাল, শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কলকাতা : হত্যাপুরী বাংলাদেশে লাশের সারি। কোথাও সেতু থেকে ঝুলছে মৃতদেহ। কোথাও হোটেলেই পুড়িয়ে খুন। ঢাকা মেডিক্যালে আনা হয়েছে আরও ২১টি ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৪ পুলিশ কর্মী। ৩ দিনে ঢাকা মেডিক্যালে আনা হয়েছে ৬৯টি মৃতদেহ। উত্তরা পূর্ব থানায় হামলার ঘটনায় নতুন করে ১৩ জনের দেহ উদ্ধার।
ক্রমেই সঙ্কটজনক হচ্ছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের হাল। আর যাঁরা ভারত থেকে গিয়ে আটকে পড়েছেন বাংলা দেশে, তাঁদের পড়তে হল আরও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফেরা যেন নতুন জীবন পাওয়া। বারবার যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুমুখ থেকে রক্ষা পেতে হল।
হাসিনা সরকারের পতনের পরেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দুদের ওপর একের পর এক হামলার অভিযোগ
সামনে আসছে। বাংলাদেশের একাধিক জায়গায় বাড়িঘর ভাঙচুর, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ চলেছে অবাধে। মেহেরপুরে অগ্নিসংযোগ করা হয় ইস্কনের জগন্নাথ মন্দিরে। বাদ যায়নি ঢাকাও। সেখানও আক্রান্ত হয়েছে হিন্দুরা। যা নিয়ে এদিন সংসদে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর থেকে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও।
হাসিনা দেশছাড়ার পর আওয়ামি লিগের নেতা কর্মী ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার একের পর এক ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে এপার বাংলায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা দেবদাস মণ্ডল। কোনও রকমে আতঙ্কপুরী থেকে বেরিয়ে এসেছেন। নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপত্তার খোঁজে এসেছেন ভারতে। এ দেশে পা রেখে দেবদাস বলছেন, 'এখন তো আমাদের ওখানে জানমাল নিয়ে বেঁচে থাকা একটা দায়। যেহেতু আমরা ওইদেশে আওয়ামি লিগের রাজনীতি করেছি, আমাদের থাকার মতো এই মুহূর্তে কোনও পরিস্থিতি নেই। এজন্য আমাদের বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে। ...জীবন বাঁচানোর তাগিদে চলে এসেছি। দেবদাস আরও বলছেন, 'হিন্দুদের মন্দিরে ভাঙছে।
হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে পুরো দেশে...ভয়াবহ অত্যাচার। এগুলো ভাষায় বলে প্রকাশ করা যাবে না।'
অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে দেশে ফিরেছেন ভারতের বাসিন্দা মতি অধিকারী। তিনি গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে তিনি যখন নিজের দেশে ফিরে আসতে চাইছিলেন, তখন পদে পদে তাঁকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি জানালেন,' রাস্তায় আমরা বাইকে আসছিলাম, ছেলেরা আমাদের আটকায়। বলে, এই হিন্দুরা তোমরা কোথায় যাও? পালাচ্ছ? আমরা বলি, না, পালাচ্ছি না। আমাদের পাসপোর্ট আছে। আমরা ভারতীয় লোক। আমাদের পাসপোর্ট আছে। আমরা পাসপোর্ট নিয়ে এসেছি, পাসপোর্ট নিয়ে চলে যাব।
'
এই কথা বলার পর তাঁর হাত থেকে পাসপোর্টটা নিয়ে নেওয়া হয়। তারপর ভয় দেখিয়ে বলা হয়, 'টাকা দাও। নইলে পাসপোর্ট পুড়িয়ে দেব' বাধ্য হয়ে পাসপোর্ট বাঁচাবার জন্য় তিনি ১০০০ টাকা দেন।
এভাবেই ভয়ঙ্কর অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ও-দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের । আর বাংলাদেশের নাগরিক সংখ্যালঘুদের কথা তো বলার মতোই নয়। 'আমরা স্বাধীন দেশে বাস করি না?আমরাও দেশের নাগরিক না?' তাঁদের আর্ত চিৎকার শুনছে কে !