সমীরণ পাল ও ময়ূখঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠছে ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতি। বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে হিন্দুদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচারের অভিজ্ঞতা শোনালেন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কেবলমাত্র প্রাণ বাঁচাতে চলে এসেছেন এপারে। 


সদ্য বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছেন। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ এখনও স্পষ্ট ! ২৪ ঘণ্টা আগের কথা মনে করলেই এখনও কেঁদে ফেলছেন, ঢাকার সাভারের বাসিন্দা এবং ISKCON-এর ভক্ত মঞ্জু মণ্ডল। ISKCON-এরই সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতারের পর থেকেই অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। হিন্দুদের ওপর লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদীরা। ভাঙচুরের পাশাপাশি জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ISKCON-এর একাধিক শাখা। ISKCON-কে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ঢাকায় মিছিল করছে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন। এই অবস্থায় প্রাণ হাতে করে ভারতে চলে এসেছেন সাভারের বাসিন্দা এই মহিলা।


তিনি বলেন, "ওঁকে (চিন্ময়কৃষ্ণ দাস), ওই যে সনাতন ধর্ম নিয়ে পথ আটকেছে কেন ? তিনমাস ধরে ওঁরা সনাতন ধর্মকে চাইছেন। স্বীকৃতি চাইছে, স্বাধীনতা চাইছে তাই। সনাতন ধর্মকে কেউ ইয়ে করছে না। অত্যাচার করছে। উনি কোনও মিথ্যা আশ্রিত নন। উনি সেই নারায়ণ। আমরা চাইব ওঁকে একটু দেখতে পাই যেন। আমাদের তো প্রভু (চিন্ময়কৃষ্ণ দাস) কষ্ট হচ্ছে। উনি কষ্ট পাচ্ছেন, আমরাও কষ্ট পাচ্ছি।"

৫ অগাস্ট, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে ঝামেলা। অশান্তির সেই আগুনে পুড়েছে বাংলাদেশের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত কলেজ কর্মী বিভূতিভূষণ মণ্ডলের বাড়ি। এই অবস্থায় সম্প্রতি প্রাণ ভয়ে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে চলে এসেছেন এই ব্যক্তি। বাংলাদেশের নাগরিক বিভূতিভূষণ মণ্ডল বলছেন, "আমরা খুব খারাপ পজিশনে আছি। সংখ্যালঘুরা, আমরা খুব খারাপ পজিশনে আছি। এভাবে একটা দেশ চলে না। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। সংখ্য়ালঘু যারা তাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। ৫ অগাস্ট আমার বাড়ি পোড়াল। তীর্থর ভিসা করেছি। কিন্তু মুখ্য তো তীর্থ নয়। মুখ্য হল হাউ টু সেভ মাই সেল্ফ।"

একসময় বাংলাদেশের ফরিদপুরে থাকতেন তুষার দত্ত। এখন পাকাপাকিভাবে তিনি কলকাতার বাসিন্দা হয়ে গেলেও, আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব সবই এখনও পদ্মাপারে। তাঁর গলাতেও আতঙ্কের সুর ! ব্যবসায়ী তুষার দত্ত বলেন, "আমার বন্ধুবান্ধব কিছু আসার কথা ছিল। আমার আত্মীয়স্বজনও মাঝে মাঝে আসেন। তাঁরা এখন এমন পরিস্থিতি, চলমান পরিস্থিতির ওপর তাঁরা এখন আর সাহস করে এগোতে পারছেন না ভারতের দিকে। তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে। ব্যবসাবাণিজ্য করতে পারছেন, কিন্তু শুনছি বিভিন্ন জায়গায় ডিমান্ড করছে যে, এত টাকা দিতে হবে। না হলে ব্যবসা বাণিজ্য করতে দেব না। হিন্দুদের যে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ব্যবসা আছে, সেখানে এসে ডিমান্ড করছে, আমাকে দিতে হবে ৫ লক্ষ টাকা। তারা কারা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।"

দমবন্ধকর এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি কবে মিলবে ? কবে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে বাংলাদেশের হিন্দুরা ? প্রশ্নটা থাকছেই।