নয়াদিল্লি: শেখ হাসিনার আমলে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ চুক্তিগুলি নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্ক। এবার সেই নিয়ে তদন্তের পথে হাঁটছে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূসের সরকার। ইউনূস সরকারের তরফে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার সেই কমিটিই বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিল। দেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ওই চুক্তির খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখার সুপারিশ করেছে তারা। যে বিদ্যুৎচুক্তিগুলি তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় শিল্পপতি গৌদম আদানির সংস্থার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিও। (Bangladesh News)


রবিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক আধিকারিক এই মর্মে বিবৃতি জারি করেন। বলা হয়, 'বিদ্যুৎ এবং সম্পদ মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল রিভিউ কমিটি খ্যাতনামা আইনি এবং তদন্তকারী সংস্থার নিযুক্তির সুপারিশ করেছে, যাতে শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারী সরকার ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যে বিদ্যুৎ চুক্তিগুলি স্বাক্ষর করেছিল, তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়'। ইউনূসের দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা এই বিবৃতি দেন। (Adani Group)


বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, আদানিদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত হবে আরও ছয়টি বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে, যার মধ্যে একটি চিনা সংস্থাও রয়েছে, যারা ১৩২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার ১২৩৪.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করে আদানিরা। ইউনূস সরকারের দাবি, আন্তর্জাতিক আইনে হাসিনার আমলে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ চুক্তিগুলি খারিক করার সপক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। এমন আরও কিছু চুক্তি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।


হাসিনা আমলে আদানিদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠে আসছে বাংলাদেশে। হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৭ সালে আদানিদের সঙ্গে বিদ্যুৎচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ঢাকার। ঠিক হয়, ঝাড়খণ্ডে আদানিদের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎই কিনবে তারা। কিন্তু আদানিরা যে টাকায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে, তা অন্য সংস্থার থেকে অনেকটাই চড়া বলে অভিযোগ। ভারতের অন্যান্য সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ইউনিট প্রতি গড়ে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) দরে বিদ্যুৎ কিনলেও, আদানিদের কাছ থেকে ১৪ টাকা ২ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করতেই আদানিদের থেকে চড়া দামে হাসিনা বিদ্যুৎ কিনতে রাজি হন বলেও রয়েছে অভিযোগ।


এমনকি বকেয়া নিয়েও হাজারো অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, আদানিরা যেখানে ৯৬ ডলার করে দাম ধরছে, সেখানে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দর ধরছে ৭৫ ডলার। বকেয়া মেটাতে দেরি হলে আদানিরা ১৫ শতাংশ হারে সুদ নিলেও, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সুদ নিচ্ছে না। ফলে একতরফে ভাবে আদানিরা এই চুক্তির বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। 


বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ভারতেও। ঝাড়খণ্ডের গোন্ডায় আদানিদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার উপর নির্ভর করে। বিদেশ থেকে আনা কয়লায় শুল্কছাড় থেকে, যন্ত্রপাতির উপর GST ছাড়, আদানিদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ মোদি সরকারের বিরুদ্ধেষ এমনকি পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে যে কর দিতে হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে, আদানিদের ক্ষেত্রে তা মাফ করে দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। ঝাড়খণ্ডে ওই কয়লা খনি নির্মাণের জন্য যেভাবে জমি নেওয়া হয়, তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বিদেশে রফতানি করতে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ হলেও, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো আইন সংশোধন করে আদানিদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরজা ভারতীয় বাজারে খুলে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের।