নয়াদিল্লি: নাগরিক হিসেবে যৌনকর্মীদের জীবন সুনিশ্চিত করে নয়া আইন আনল বেলজিয়াম। যৌনকর্মীরা সরকারি স্বীকৃতি পেলেন সেখানে। অন্যান্য পেশায় যেমন সুযোগ-সুবিধা মেলে, এখন থেকে বেলজিয়ামের যৌনকর্মীরাও সেই সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি, স্বাস্থ্যবিমা এবং পেনশন, সবকিছুই পাবেন তাঁরা। অসুস্থতার সময় নিতে পারবেন 'Sick Leave'ও। (Belgium Law for Sex Workers)
শুধু তাই নয়, যৌনপল্লির নিরাপত্তার দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে নয়া আইনে। অপরাধের রেকর্ড রয়েছে, এমন লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বলা হয়েছে। যৌনকর্মীদে ঘরে অ্যালার্ম বসাতে বলা হয়েছে, যাতে বিপদে পড়লে সাহায্য চাইতে পারেন তাঁরা। অপরাধের রেকর্ড রয়েছে, এমন ব্যক্তিকে যৌনপল্লি চালানোর অনুমতি দেওয়াও হবে না বলে জানানো হয়েছে। (Sex Workers Rights)
যৌনকর্মীদের অধিকার সুনিশ্চিতকরণে এই প্রথম কোনও দেশ এমন যুগান্তকারী আইন নিয়ে এল। ২০২২ সালে বেলজিয়ামে যৌনবৃত্তি অপরাধমুক্ত হয়। আর তার পরই নাগরিক হিসেবে যৌনকর্মীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা নিয়ে শুরু হয় ভাবনা-চিন্তা। করোনার সময় এই যৌনকর্মীরা একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। সেই নিয়ে লাগাতার প্রতিবাদ, আন্দোলনের জেরেই নায় আইন পাস হল বেলজিয়ামে। যৌনকর্মীদের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিতে নয়া আইন চালু হল।
বেলজিয়ামে ইউনিয়ন অফ সেক্স ওয়র্কার্স (UTSOPI)-এর প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়া সংবাদমাধ্যমে বলেন, "পেশা যদি বেআইনি হয়, সেখানে সুরক্ষার বালাই থাকে না। এতদিনে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সুযোগ পেলাম আমরা।" ভিক্টোরিয়ার পাঁচ সন্তান রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, টাকার জন্য গর্ভাবস্থাতেও কাজ করে যেতে হয়েছে তাঁকে।
ভিক্টোরিয়া জানিয়েছেন, এতদিন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই কাটিয়েছেন। এমনকি গ্রাহক তাঁকে ধর্ষণও করে গিয়েছে। থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে, তা গ্রহণই করা হয়নি। বরং পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য ছিল, "যৌনকর্মীদের আবার ধর্ষণ কী!" এবার অন্তত মাথা তুলে, সম্মানের সঙ্গে বাঁচার সুযোগ পাবেন বলে আশাবাদী ভিক্টোরিয়া।
Human Rights Watch-এর গবেষক এরিন কিলব্রাইডের মতে, "পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা ঘটেনি। এটা সেরা পদক্ষেপ। প্রত্যেক দেশের উচিত সঠিক পথে এগনো।" যদিও কেউ কেউ এতে সিঁদুরে মেঘও দেখছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংংস্থা Isala-র জুলিয়া ক্রুমিয়ের মতে, যৌনবৃত্তিকে প্রাচীনতম পেশা না বলে প্রাচীনতম শোষণের উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। এই আইনের ফলে আরও মেয়েদের যৌনবৃত্তির দিকে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।