করুণাময় সিংহ, মালদা: তাঁরা দিব্য়ি আছেন। খাচ্ছেন, ঘুমোচ্ছেন, কাজ করছেন। আবার বিডিও অফিসে গিয়ে বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন। কিন্তু কলমের খোঁচার এমনই জোর- তাঁরা হারিয়েছেন ভোটাধিকার। ভোটার লিস্টে তাঁরা মৃত! অবিলম্বে তাঁদের বাঁচিয়ে তোলা হোক, এই দাবিতে বিডিওর কাছে আবেদন জানিয়েছেন ৪৪ জন ভোটার। মালদার কালিয়াচকের ঘটনা। জীবিত কারও নাম ভোটার লিস্ট থেকে বাদ পড়বে না বলে আশ্বাস বিডিওর।


‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘জীবিত ও মৃত’ র এই বিখ্যাত লাইনই যেন সত্যি হল মালদার কালিয়াচকে। বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখিয়ে ৪৪ জন মৃত ভোটার প্রমাণ করলেন তাঁরা মারা যাননি।


কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের গোলাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের শশানি এলাকার এই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য। তাঁরা দিব্য়ি আছেন। কিন্তু কলমের খোঁচায় তাঁদের কোনও অস্তিত্ব নেই। ভোটার লিস্টে তাঁরা মৃত! এক আধজন নয়, এরকম হয়েছে ৪৪ জনের সঙ্গে। জীবিত মানুষ কী করে মৃত হল, এই প্রশ্ন তুলে শনিবার বিডিও অফিসে ভোটার কার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। 


এমনই একজন 'মৃত' ভোটার কদ্দুস মিয়া বলছেন, গ্রামে শুনতে পেলাম অনেকের নাম ভোটার লিস্ট থেকে বাদ পড়েছে। আমি যখন  দেখতে যাই তখন দেখি আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনের ভোটার লিস্টে নাম নেই। আমাদের মৃত্যু হয়েছে এই বলে নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।


মালদার বৈষ্ণবনগরের গোলাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে তৃণমূলের দখলে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের শশানি এলাকায় ৭৪ এবং ৭৫ নম্বর বুথে, মৃত্যুর কারণ দেখিয়ে ৪৪ জন ব্যক্তির নাম বাদ পড়েছে ভোটার লিস্ট থেকে। প্রত্যেকে যে বেঁচে আচেন, তার প্রমাণ দিতে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৪৪ জন।


আরেক 'মৃত' ভোটার রূপক মিয়া বলছেন, বিডিওর কাছে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি, জানতে চাই কে এই ভাবে আমাদের নাম কাটলো। আমরা জীবিত আছি আমাদেরকে মৃত দেখানো হয়েছে। যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তার শাস্তি চাই।


ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। মালদা জেলার যুব কংগ্রেস সভাপতি সারোয়ার জাহানের কথায়, ভোট লুটে এটা একটা নয়া কৌশল তৃণমূলের। এই ভাবে তারা আবার ভোট লুট করতে চাইছে। মালদা জেলা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়েছে সঠিক ব্যবস্থা না হলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।


মালদা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী বলছেন, বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি নেই তাই এই ধরনের মন্তব্য করছেন। নাম তোলা বা বাদ দেওয়া প্রশাসনের কাজ। সেটা প্রশাসন দেখবে।  জেলাশাসককে বলব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।


এ বিষয়ে কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের বিডিও মামুন আক্তার জানিয়েছেন, জীবিত রয়েছেন এমন কোনও ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে না। সেই বিষয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গল্পে এক শ্রাবণের রাতে কাদম্বিনী মারা গিয়েছে বলে ধরে নিয়েছিল সবাই। শেষে ফিরে এসে, পুকুরে ডুবে আত্মহত্যা করে তাঁরে প্রমাণ করতে হয়েছিল, সে আগে মরেনি।  একইভাবে বিডিও অফিসে ৪৪ জন ভোটার প্রমাণ করলেন, তাঁরাও মরেননি।