কলকাতা: প্রথম ইনিংসজুড়ে তাঁর নজর ছিল মূলত উন্নয়নে। যাবতীয় বার্তা, প্রতিশ্রুতি ঘোরাফেরা করত সেই উন্নয়নের চারপাশেই। কিন্তু, দ্বিতীয় ইনিংসে ক্ষমতায় ফেরা ইস্তক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর দিয়েছেন সুশাসন ও রাজধর্ম পালনে। যা রাজ্যবাসীর প্রধান দাবি।
এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন শহিদ সমাবেশের সভামঞ্চে উঠবেন, তখন তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা রাজ্য। তিনি কী বার্তা দেন, তা শোনার অপেক্ষায়। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, একুশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিমুখী বার্তা দিতে পারেন -- এক, সুশাসন ও রাজধর্ম। দুই, উন্নয়ন এবং তিন, দলের নেতা-কর্মীদের কড়া বার্তা।
তবে সবথেকে বেশি গুরুত্ব সম্ভবত থাকবে সেই সুশাসনেই। কারণ, ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দল এবং প্রশাসনের অন্দরে তিনি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তোলাবাজি, প্রোমোটাররাজ সিন্ডিকেটরাজ, রাস্তা জবরদখল বা চোরা চালানের মতো ঘটনায় দলের কারও জড়িত থাকা চলবে না। দলের দাপুটে কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে  তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই বার্তা স্রেফ কথায় আটকে থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশও। রাজারহাট, সিন্ডিকেট, নিউটাউন-- যেখানেই সিন্ডিকেট, দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। ধরপাকড় অভিযানে গ্রেফতারির সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলকে কঠোর শৃঙ্খলায় বাঁধতে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থার কথাও ঘোষণা করতে পারেন তিনি। সূত্রের খবর, দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি যে বার্তা দিতে পারেন, তা হল-- দলের কারও উপদলীয় কাজকর্ম এবং বিশৃঙ্খল আচরণ বরদাস্ত নয়।
দলকে আরও জনমুখী করতে নেতা-কর্মীদের আরও সংযত বিনয়ী, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় করতে হবে। বিপদে মানুষের পাশে থাকতে হবে। সরকারি উন্নয়নের সুফল যাতে মানুষের কাছে পৌঁছয়, তার জন্য দলীয় কর্মীদের সক্রিত হতে হবে। পুলিশের কাজকর্মে দলীয় হস্তক্ষেপ চলবে না। এবং, দল ও প্রশাসনের মধ্যে থাকবে স্পষ্ট লক্ষ্মণরেখা টানতে হবে।
বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর তৃণমূল নেত্রীর পাখির চোখ এখন ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপর ২০১৯-এর লোকসভা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সে কথা মাথায় রেখেই তৃণমূল সরকারকে মানুষ যাতে ‘আমার সরকার’ বল ভাবতে পারে, তার জন্য রাজধর্ম পালনের স্পষ্ট দিকনির্দেশ করতে পারেন তৃণমূলনেত্রী।