কলকাতা: একুশের মঞ্চ থেকে সিন্ডিকেট এবং তোলাবাজি-- এই শব্দদুটি একবারও শোনা গেল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। কিন্তু, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এবং তারপর থেকে একাধিক গ্রেফতারির ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মনে আশা তৈরি হয়েছিল, সবচেয়ে বড় মঞ্চ থেকে নিশ্চয় এই দু’টি ইস্যুতে কড়া বার্তা দেবেন তৃণমূল নেত্রী। স্পষ্টই বুঝিয়ে দেবেন, সিন্ডিকেট-তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত থাকলে কড়া চাবুকের ব্যবস্থা করা হবে!
কিন্তু, দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের বর্ক্তৃতায় দিল্লি-ত্রিপুরা-গুজরাত সব কিছু ছুঁয়ে গেলেও, একটি বারের জন্যও রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে চর্চিত দু’টি শব্দ মুখে আনলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু বললেন, যারা মন্ডা মিঠাইয়ের লোভে পা দেয়না, আমি তাদের সাপোর্ট করি। ব্যক্তি স্বার্থের উপর দলীয় স্বার্থ। দু’একজন খারাপ কাজ করে, দু’একজন ব্যক্তিস্বার্থ দেখে, আর বদনাম হয় দলের। বিরোধীদের পাল্টা কটাক্ষ, দু’একজন নয়, গোটা দলটাই খারাপ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, সিন্ডিকেট এবং তোলাবাজি-- এই ইস্যু নিয়ে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১-এর মঞ্চ থেকে সরাসরি বার্তা দিতেন, তাহলে তো তার কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি হত! দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর কাছ থেকে তো এটাই আশা করছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিধানসভা ভোটে শহরাঞ্চলে কিছুটা ধাক্কা খাওয়ার পর এটাই তো ছিল তাদের উদ্দেশে বার্তা দেওয়ার সবচেয়ে আদর্শ মঞ্চ। অথচ, সরাসরি সেই পথে হাঁটলেন না তৃণমূল নেত্রী। ঘুরিয়ে বললেন,  মানুষের বিরুদ্ধে কাজ অ্যালাউ করব না। আইনশৃঙ্খলা কড়া হাতে রক্ষা করতে হবে।
কিন্তু, এর আগে তো প্রথম ইনিংসে সরাসরি সিন্ডিকিটের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, সিন্ডিকেট করলে তৃণমূল করবেন না। কিন্তু, এবার একাই ডবল সেঞ্চুরির পরও চুপ রইলেন তৃণমূল নেত্রী।  শুধু তৃণমূলের মহাসচিবকে বলতে শোনা গেল, যারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদের উদ্দেশ্যে বলচি, আদর্শচ্যুতদের দলে কোনও ঠাঁই নেই।
তবে সরাসরি তৃণমূল নেত্রীকে হুঁশিয়ারি দিতে শোনা না গেলেও, দল চালানোর জন্য টাকা তোলার প্রশ্নে তিনি লক্ষ্মণরেখা বেঁধে দিলেন। বললেন, লোকের কাছ থেকে টাকা তুলে দল চালাব না। সদস্যপদের চাঁদায় দল চালাব। দলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে। এমন কাজ করুন যেন কেউ আপনাদের সরাতে না পারে।
কিন্তু, বিরোধীদের দাবি, সিন্ডিকেট-তোলাবাজি ছাড়া যে দল চালানো যাবে না, তা ভাল করেই জানে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই সিন্ডিকেট-তোলাবাজি নিয়ে বেশি কড়া হলে, পাছে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই কি সরাসরি হুঁশিয়ারির পথে হাঁটলেন না তৃণমূল নেত্রী? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের একাংশে।