এ ম্যাডাম সে ম্যাডাম নন! শুভ্রা নন, ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’ অন্য কেউ?

ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ Updated at: 08 Feb 2017 07:28 AM (IST)



এক ‘ম্যাডামে’র হদিস করতে গিয়েই আর এক ‘ম্যাডাম’ সামনে এসে গিয়েছেন।

রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে জনৈক ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’ ভেবে। কিন্তু পরে পুলিশ জানছে, এ ম্যাডাম সে ম্যাডাম নন। সারদায় সুদীপ্ত সেনের ডান হাত যেমন ছিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়, রোজ ভ্যালিতে গৌতমের ডান হাত ছিলেন এক মহিলা। কর্মীদের কাছে তিনিই ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’ বলে পরিচিত।

এই ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’কে খুঁজছে কেন পুলিশ? সম্প্রতি ম্যাঙ্গো লেনে এক হাওয়ালা কারবারির হদিস পেয়ে সেখানে হানা দেন কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা। সেই হাওয়ালা কারবারির দফতরে ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’ নামে একটি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পান তাঁরা। প্রাথমিক ভাবে তখন পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল, গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রাই হয়তো এই ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’। সেই থেকে গত সোমবার পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দক্ষিণ কলকাতায় শুভ্রার ফ্ল্যাটে হাজির হতেন কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা। শুধু তাই নয়, শুভ্রাকে ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’ বলে ধরে নিয়েই কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর যাতায়াতের ভিডিও ফুটেজ চেয়ে পাঠায় পুলিশ। ১৮ জানুয়ারির সেই ভিডিও ফুটেজেই শুভ্রার সঙ্গে রোজ ভ্যালি মামলার তদন্তকারী ইডি অফিসার মনোজ কুমারের ছবি সামনে আসে। কাহিনিতে এই ‘টুইস্ট’-এর মুখোমুখি হয়ে পুলিশ তখন আবার মনোজ ও শুভ্রার ‘সম্পর্ক’ এবং রোজ ভ্যালি তদন্তে তার কোনও ভূমিকা আছে কি না, তাই নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করে। সংবাদমাধ্যমে ওই ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ার পরে রোজ ভ্যালি তদন্তের ভার মনোজের হাত থেকে সরিয়ে নেয় ইডি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।

তা হলে ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’র কী হল? আনন্দবাজারকে শুভ্রা বলেন, ‘‘আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন। আমি তো রোজ ভ্যালির অফিসে যেতামই না। রোজ

ভ্যালির ব্যানারে সিনেমা করেছি ঠিকই, কিন্তু, কখনও কোনও কর্মী আমাকে ম্যাডাম বলে ডাকেননি। সামনেও নয়, আড়ালেও নয়। ওই সংস্থার এক মহিলা অফিসার, যিনি খুব প্রভাবশালী ছিলেন, তাঁকেই ওই নামে ডাকা হতো।’’ শুভ্রার কথায়, তিনি তদন্তকারীদেরও এ কথা জানিয়েছেন। দাবি করেছেন, হাওয়ালা অফিসে যাঁর অ্যাকাউন্ট পাওয়া গিয়েছে, সেটা তিনি নন।সেই ‘ম্যাডাম রোজ ভ্যালি’ এখন কোথায়? পুলিশ বলছে, তিনি কর্পূরের মতো উবে গিয়েছেন। অথচ ২০১৫ সালের মার্চ মাসে গৌতম কুণ্ডু ধরা প়়ড়ার পরেও টানা ছ’মাস একা হাতেই সংস্থার সমস্ত কাজকর্ম সামলেছিলেন ম্যাডাম। আদালত চত্বরে গৌতমের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে আসতেন। গৌতমের হয়ে আইনজীবীকে হরিশ সালভেকে দাঁড় করানোর চেষ্টায় বেশ কয়েকবার দিল্লি-মুম্বইও উড়ে যান। এই হরিশই গাড়ি চাপা দেওয়ার মামলায় সলমনের খানের হয়ে লড়েছিলেন। কিন্তু ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রোজ ভ্যালি-র এমডি শিবনাথ দত্ত গ্রেফতার হওয়ার পরেই আচমকা উধাও হয়ে যান ম্যাডাম।

রোজ ভ্যালি কর্মীদের একাংশের কথায়, ম্যাডাম গৌতমের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। রোজ ভ্যালির অভ্যন্তরে বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত এক সময় তিনিই নিতেন। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে লড়াই করে উঠে আসা  এই মহিলা যেমন সুন্দরী, তেমনই বুদ্ধিমতী। অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু তাঁর কোনও মোবাইল নম্বর বা যোগাযোগের অন্য কোনও উপায় এ দিন কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

কেন উধাও হলেন ম্যাডাম? কর্মীরা প্রধানত দু’টি বিষয়ের উপরে আলোকপাত করেছেন। এক, শিবনাথ দত্ত গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পরে ভয় পেয়ে যান ম্যাডাম। আশঙ্কা করেছিলেন, সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়ে তাঁকেও গ্রেফতার করা হবে। দুই, ম্যাডামের বাড়বাড়ন্ত খুব একটা ভাল চোখে দেখেননি শুভ্রা। এক কর্মীর কথায়, ‘‘শুভ্রা মনে করেছিলেন, জেলে বসেও গৌতম ম্যাডামকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’’

কিন্তু দেড় বছর পরে সেই ‘ম্যাডাম’-এর নামই আবার উঠে এসেছে হাওয়ালা মামলায়। যার কিনারা করতে পুলিশ ভুল করে শুভ্রা ম্যাডামের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।


- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -

© Copyright@2024.ABP Network Private Limited. All rights reserved.